এমন একটা খবর অপেক্ষা করছে ভাবিনি: মিম
সাবেক সংসদ সদস্য, বরেণ্য লেখক এবং গবেষক শহীদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সার মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
অধ্যাপক পান্না কায়সার শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের সহধর্মিণী এবং অভিনেত্রী শমী কায়সারের মা। মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শমী কায়সার।
বিজ্ঞাপন
পান্না কায়সারের মৃত্যুতে দেশজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এই মহীয়সী নারীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ শোবিজ অঙ্গন। শোকের এই মুহূর্ত সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে গেছে বিদ্যা সিনহা মিমকে। পান্না কায়সারের জীবনীচিত্রে অভিনয় করছেন এ চিত্রনায়িকা। কথা ছিল তার সঙ্গে দেখা করে তার সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানবেন। কিন্তু তা আর হলো কই!
শোকের সঙ্গে আক্ষেপ এসে মিশেছে একবিন্দুতে। যার প্রকাশ ঘটেছে অভিনেত্রীর ফেসবুক পোস্টে। মিম লেখেন, “বিধাতার কী এ এক অদ্ভুত সমীকরণ। আমরা ভাবি এক, কিন্তু তার পরিকল্পনা আরেক—যা সাধারণের বোঝা বড় দায়। ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’ সিনেমার শুটিং করছি। এই সিনেমায় আমি পান্না কায়সারের চরিত্রে অভিনয় করছি। গতকাল শমী আপু (শমী কায়সার) বললেন, তোমাদের তো শুক্রবার ও শনিবার শুটিং নেই। তাহলে রেডি থেকো। তোমাদেরকে আম্মার সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাব। শুনেই তো আমি ভীষণ এক্সাইটেড। মহীয়সী নারী শ্রদ্ধেয় পান্না কায়সারের সঙ্গে দেখা করব। গেল দুই মাস ধরে যাকে বই পড়ে, টেলিভিশনের বিভিন্ন ইন্টারভিউ থেকে জানার চেষ্টা করেছি, সেই মানুষটার সঙ্গে মুখোমুখি বসে গল্প করব। নানান অভিজ্ঞতা শুনব। আড্ডা দেব। জীবনের অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা হবে। অসাধারণ মুহূর্তের সাক্ষী হব। আরও কত কী যে ভাবনা মনের মধ্যে।”
অভিনেত্রীর সংযোজন, ‘চাইলেই কি আর সব পূরণ হয়। রাত শেষে সকালবেলা এমন একটা খবর অপেক্ষা করছে ভাবিনি। ঘুম থেকে ওঠেই শুনি পান্না কায়সার আন্টি চিরদিনের জন্য আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার মৃত্যুর খবরে থমকে গেলাম। স্তব্ধ হলাম। গেল কিছুদিন ধরে মনের মধ্যে লালন করা মহীয়সী পান্না কায়সারকে হারিয়ে মনে হচ্ছে, আমারই একজন আপনজন হারালাম। সৃষ্টিকর্তার কাছে তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
গত মঙ্গলবার ঢাকার ইস্কাটনের একটি বাড়িতে শুরু হয়েছে ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’ সিনেমার শুটিং। পান্না কায়সারের লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধ: আগে ও পরে’ অবলম্বনে তৈরি হচ্ছে সিনেমাটি। জানা গেছে, এই ছবির মাধ্যমে পান্না কায়সারের দৃষ্টিকোণ থেকে শহীদুল্লাহ কায়সারকে আবিষ্কার করা হবে। এতে শহীদুল্লাহ কায়সার চরিত্রে অভিনয় করছেন মোস্তফা মনওয়ার। শমী কায়সারের প্রযোজনায় ছবিটি পরিচালনা করছেন ওয়াহিদ তারেক।
বিধাতার কি এ এক অদ্ভুত সমীকরণ। আমরা ভাবি এক, কিন্তু তাঁর পরিকল্পনা আরেক—যা সাধারণের বোঝা বড় দায়। ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’...
Posted by Bidya Sinha Saha Mim on Friday, August 4, 2023
উল্লেখ্য, ১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের সঙ্গে বিয়ে হয় পান্না কায়সারের। সেদিন ঢাকা শহরে জরুরি অবস্থা জারি ছিল। পুরো দেশ তখন গণআন্দোলনে উত্তাল। স্বামীর হাত ধরে পান্না কায়সারের পরিচয় হয় আধুনিক সাহিত্য ও রাজনীতির সঙ্গে। তাদের সংসারজীবন স্থায়ী হয় মাত্র দুই বছর দশ মাসের মতো।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর কজন সদস্য শহীদুল্লাহ কায়সারকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফেরেননি। এরপর পান্না কায়সার একা হাতে মানুষ করেছেন তার দুই সন্তান শমী কায়সার ও অমিতাভ কায়সারকে। কিন্তু তিনি শুধু সংসারজীবনে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, যুক্ত করেছেন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে।
কেএইচটি