কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানার জন্মদিন আজ
অভিনয় থেকে দূরে আছেন দীর্ঘ ২৬ বছর যাবৎ। তারপরও ভক্ত-দর্শকের মানসপটে জ্বলজ্বল করছে একটি নাম; শাবানা। আজ (১৫ জুন) এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীর জন্মদিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি।
শাবানার আসল নাম আফরোজা সুলতানা রত্না। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে তার জন্ম। তবে বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ১৯৬২ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন শাবানা। সেই সিনেমার নাম ছিল ‘নতুন সুর’। তখনও তার শাবানা নামটি আসেনি। রত্না নামেই অভিনয় করতেন।
বিজ্ঞাপন
পড়াশোনায় মন ছিল না ছোটবেলা থেকেই। দুরন্তপনায় নিজে মেতে থাকতেন, মাতিয়ে রাখতেন বাকি সবাইকে। বাবা-মা তাকে ভর্তি করান ঢাকার গেন্ডারিয়া হাই স্কুলে। কিন্তু রত্নার চঞ্চলা মন, পড়াশোনায় বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তার। মাত্র ৯ বছর বয়সেই স্কুলের গণ্ডিকে বিদায় জানান।
সেসময় সমাজব্যবস্থা এমন ছিল, চঞ্চল মেয়েকে শান্ত-ভদ্র করার একটাই উপায়, তাকে বিয়ে দিয়ে দাও। তারওপর ঢোলের বাড়ি হিসেবে ছিল পড়াশোনায় অমনোযোগিতা। কিন্তু তার জীবনের চিত্রনাট্য লেখা ছিল ভিন্ন আঙ্গিকে। রত্না হবেন ঢালিউডের রত্ন শাবানা—তা যেন লিখে রেখেছিলেন বিধাতা।
কিংবদন্তি নির্মাতা এহতেশাম ছিলেন শাবানার চাচা। তার মাধ্যমেই সিনেমায় আসেন তিনি। ১৯৬৭ সালে এহতেশাম পরিচালিত উর্দু সিনেমা ‘চকোরী’তে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। এই সিনেমাতেই রত্না থেকে তার নাম শাবানা রাখেন এহতেশাম।
দীর্ঘ ঝলমলে ক্যারিয়ারে শাবানা অভিনয় করেছেন প্রায় ৩০০ সিনেমায়। এরমধ্যে রয়েছে বহু দর্শকনন্দিত, ব্যবসাসফল সিনেমা। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘ভাত দে’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙা ভাবি’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘বিরোধ’, ‘আনাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘জীবন সাথী’, ‘মাটির ঘর’, ‘লুটেরা’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কেউ কারো নয়’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘দুঃসাহস’, ‘পুত্রবধূ’, ‘আক্রোশ’ ও ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ ইত্যাদি।
শাবানাকে বলা হয় বাংলাদেশের সিনেমায় সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী। পরবর্তী প্রজন্মের নায়িকারা তাকেই আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করেন। অনবদ্য অভিনয়ে দর্শকদের যেমন মুগ্ধ করেছেন, তেমনি পুরস্কারের পাল্লাও ভারী করেছেন শাবানা। কেবল অভিনেত্রী হিসেবেই তিনি ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া প্রযোজক হিসেবে একবার এবং সর্বশেষ আজীবন সম্মাননাও পেয়েছেন এই নন্দিত অভিনেত্রী। জাতীয় পর্যায়ে এত বেশি পুরস্কার আর কোনো অভিনেত্রী অর্জন করতে পারেননি।
এছাড়াও তিনি প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, আর্ট ফোরাম পুরস্কার, নাট্যসভা পুরস্কার, কামরুল হাসান পুরস্কার, নাট্য নিকেতন পুরস্কার, ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার ও কথক একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে শাবানা বিয়ে করেছেন ওয়াহিদ সাদিককে। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৩ সালে। তাদের ঘর আলো করে আসে দুটি কন্যা ও একটি পুত্রসন্তান। সংসার সামলেও সিনেমায় একের পর এক চমক দেখিয়েছেন শাবানা। কিন্তু ১৯৯৭ সালে অজানা কারণে আচমকা ঢালিউড থেকে বিদায় নেন শাবানা। এরপর ২০০০ সালে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে চলে যান। বর্তমানে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এই ঢালিউড কন্যা।
কেএইচটি