গত কয়েক দিন ধরে আলোচনা-সমালোচনার টেবিলে ঢালিউড। তবে সেটা কোনো সিনেমা সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে নয়, নায়ক-নায়িকাদের ব্যক্তিজীবন ঘিরেই সব চর্চা। ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে এক নারী সহপ্রযোজককে ‘ধর্ষণ’সহ একাধিক অভিযোগ আনেন প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহ। অন্য দিকে গতকাল দিনভর চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির গ্রেপ্তার ও জামিন নিয়ে সরগরম ছিল পুরো দেশ।

এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে ‘লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন’ থেকে দূরে আছেন শাকিব খান। মাঝে বেশ কয়েকটি সিনেমার ঘোষণা দিলেও কোনোটিই শুটিং ফ্লোরে গড়ায়নি। উল্টো বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক এমন সময়ে ভক্তরা চাইছিলেন নতুন কোনো সুসংবাদ নিয়ে হাজির হবেন প্রিয় নায়ক। কিন্তু দৃশ্যপটে ধরা দিলো বিপরীত চিত্র! কালবৈশাখী ঝড়ের মতো তার বিরুদ্ধে উড়ে এলো ধর্ষণ, অসদাচরণ, চুক্তিভঙ্গসহ গুরুতর বেশ কিছু অভিযোগ।

ঘটনার আকস্মিকতায় চিন্তায় পড়ে যান ভক্তরা। ওইদিকে নায়কের পক্ষ থেকেও অভিযোগের ব্যাপারে কোনো জবাব আসছিল না। এরপর গত বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ওই প্রযোজকের সঙ্গে মীমাংসার টেবিলে বসেন ঢালিউড কিং। কিন্তু অনড় অবস্থানে থাকেন প্রযোজক। আলোচনায় কোনোরকম মীমাংসা না হলে তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে থানা-পুলিশের দ্বারস্থ হন শাকিব। শোনা যায়, বিষয়টি নিয়ে আদালতেও যাবেন তিনি।

একই চিত্র মাহিয়া মাহির ক্ষেত্রেও। দীর্ঘদিন অভিনয়ের বাইরে তিনি। বর্তমানে মাতৃত্বকালীন অবসরে আছেন এই নায়িকা। দিন কয়েক আগে স্বামী রকিব সরকারকে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে যান সৌদি আরবে। সেখান থেকে ফেসবুক লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ঘুষ’ নেওয়ার অভিযোগ আনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আসামি হন। এরপর গতকাল (১৮ মার্চ) দেশে ফিরলে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার, জেলে প্রেরণ থেকে জামিনে মুক্তি লাভ সব মিলিয়ে দিনভর বেশ ধকল পোহাতে হয়েছে তাকে।

নিজে ঝামেলার মুখোমুখি হলেও কোনোভাবে চান না স্বামী রকিব সরকার কোনো ধরনের ঝামেলায় পড়ুক। গতকাল মুক্তি পেয়েই এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন মাহি। তিনি বলেন, ‘আজকে আমার সাথে যা হয়েছে, আমি নয় মাসের প্রেগনেন্ট হওয়ার পরও মানবিকতা পাইনি, আমার স্বামীর বিরুদ্ধেও এ মামলা আছে। আমি আমার স্বামীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।’

এই চরম দুঃসময়েও স্বামীর পাশে থেকেছেন নায়িকা। স্বামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও আজ রবিবার (১৯ মার্চ) সকাল পৌনে ১০টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন মাহি। ফেসবুকে সেই ছবি ভাগ করে নিয়ে ক্যাপশনে লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (পাশে অনেকগুলো লাভ ইমোজি)। যেন স্পষ্ট বার্তাই দিয়ে দিলেন, যতই ঝড় আসুক হাত ছাড়বেন না প্রিয়তম স্বামীর।

শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস

শুধুই কি মাহি? নীরবে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন আরেক চিত্রনায়িকা শবনম বুবলীও। এ ক্ষেত্রে ‘বসগিরি’ খ্যাত এই নায়িকার সমর্থন তার স্বামী ও সহঅভিনেতা শাকিব খানের জন্য। অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে গ্রেপ্তার নয়, বরং রাষ্ট্রীয় আতিথেয়তা পেয়েছে পুরো ‘সুপার হিরো’ টিম। আজ সকালে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টি স্পষ্ট করেন বুবলী।

তিনি লেখেন, “২০১৮ সালে হার্টবিট কথাচিত্র প্রযোজিত ‘সুপার হিরো’ সিনেমার শুটিংয়ে অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) রাজ্য সরকারের তখনকার সংস্কৃতিমন্ত্রী রে উইলিয়ামস রাজ্য সংসদ ভবনের নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশের সুপারস্টার শাকিব খানসহ আমাদের মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।”

তিনি জানান, সে মধ্যাহ্নভোজে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের তখনকার সড়ক ও নৌপথমন্ত্রী মেলিন্ডা পেভে, স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ জামান, ক্যান্টারবেরি ব্যাংকসটাউন সিটি কাউন্সিলর সাজেদা আক্তার সানজিদা, কনসালটেন্ট রেমন্ড সোলায়মান, পরিচালক আশিকুর রহমানসহ অনেকে।

স্ট্যাটাসের শেষাংশে বুবলী লেখেন, ‘সুন্দর এবং সম্মানের অভিজ্ঞতা বরাবরই স্বচ্ছ এবং সত্য।’ এ কথার মাধ্যমে নায়িকা বুঝিয়ে দিলেন, গ্রেপ্তারের মতো কোনো অসম্মাজনক ঘটনাই তখন ঘটেনি। ওটা পুরোটাই অসত্য একটি অভিযোগ!

মাহি, বুবলীর সঙ্গে আসবে আরেক চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের নামও। শোনা গেছে, প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহর সঙ্গে আপস মীমাংসার টেবিলে বসতে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিলেন তিনি। অপুর পক্ষ থেকে বারবার করা অনুরোধের কারণেই নাকি শাকিবের সঙ্গে এক টেবিলে বসতে রাজি হন ওই প্রযোজক। প্রাক্তনের (শাকিব খান) জন্য এখনো ভাবেন এই নায়িকা, সেটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। 

স্বামীর দুঃসময়ে পাশে থাকছেন নায়িকারা। ব্যাপারটি সমালোচকদের কাছে রীতিমতো হাসির খোরাক হলেও ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য যে, বিশেষ বার্তা বহন করছে এ কথা বলাই বাহুল্য। বিপদে যে পাশে থাকে, শক্ত করে হাতটি ধরে সেই তো প্রকৃত বন্ধু।