‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে ফারুকীর ‘আনন্দ অশ্রু’
যাদের হাত ধরে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পেয়েছে তাদেরই একজন খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। দীর্ঘদিন ধরে নানান বাহানায় সেন্সরে আটকে আছে তার ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি। ব্যাপারটি নিয়ে চাপা ক্ষোভ ছিল ফারকীর মনে। গতকাল (১৪ নভেম্বর) রাতে ক্ষোভের কালো মেঘ ভেঙে বৃষ্টি ঝরল দু’চোখে। তার এই অশ্রু বিসর্জন কোনো কষ্টের কারণে নয় বরং কৃতজ্ঞতার আনন্দে— সামাজিকমাধ্যমে নিজেই জানালেন সেকথা।
‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি প্রশ্নে উদ্বেগ জানিয়েছেন শতাধিক সংস্কৃতিকর্মী। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, সিনেমা-নাটক-সংগীত ও শিল্প-সংস্কৃতির এমন নানা ক্ষেত্রে, নানা সময় হাজির করা হচ্ছে বহুমুখী বাধা, যা নিয়ে তারা সবাই উদ্বিগ্ন। মঙ্গলবার বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ।
বিজ্ঞাপন
নিজের চলচ্চিত্র নিয়ে শতাধিক সংস্কৃতিকর্মীর উদ্বেগের বিষয়টি নজরে আসে ফারুকীর। সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে জানালেন প্রতিক্রিয়া। এদিন নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ফারকী লেখেন, “এখন আর লুকাতে চাই না। আমি মানুষটা একাকিত্বকে মৃত্যুর মতো ভয় পাই। গত তিন বছর আমার প্রচন্ড অভিমান হয়েছিল আমার সহযোদ্ধাদের ওপর, বাংলাদেশের ওপর। ‘শনিবার বিকেল’কে কেন্দ্র করে আমার ওপর যে অন্যায় করা হচ্ছিল তা কেবল আমাকে এবং আমার বউকেই (নুসরাত ইমরোজ তিশা) একা একা বইতে হচ্ছে ভেবে কত রাত যে মনে মনে অভিমানে দেশ ছেড়ে চলে গেছি তার ইয়ত্তা নাই। কত রাত যে ঘুমাতে পারি নাই, হিসাব নাই।”
চোখের জলে এদিন উবে গিয়েছিল ঘুম। এমনটি আগেও ঘটেছিল তবে এদিন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আনন্দ অশ্রুর প্রবাহমান ধারা যেন বাধ মানছিল না। ফারকীর কথায়, “কালকে রাতেও আমি ঘুমাতে পারি নাই। তবে কষ্টে না, কৃতজ্ঞতার আনন্দে। মানুষের হৃদয়ের জন্য কৃতজ্ঞতার চেয়ে ভালো কোনো ওষুধ আজও আবিষ্কার হয় নাই। কাল রাত সিডনি সময় তিনটায় যখন ঘুমাতে যাই তখনও বাচ্চু ভাই, পিপলু ভাই, অমিতাভ, জুলহাজরা হয়তো আমাদের বন্ধুদের ফোন দিয়ে যাচ্ছে ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির দাবিতে বিবৃতিতে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য। আর আমি ঘুমাবার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার চোখের পাশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমি কাত হয়ে শুয়ে যাতে তিশা টের না পায়। ও আমার মেয়েকে ছড়া শোনাচ্ছে।”
শিল্পীদের এই একাত্মতা আগামী দিনে আরও শক্তি যোগাবে পাশাপাশি এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে বিশ্বাস ‘টেলিভিশন’ নির্মাতার। তার ভাষ্যে, “সব সময় তো এরকম হয় না যে আমরা আমাদের জড়তাকে ঠেলে একটা কোনো উদ্যোগ নিতে পারি, এক সাথে। সেই হিসাবে আজকের দিনটা আমাদের দেশের শিল্পীদের জন্য একটা মনে রাখার মতো দিন। ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির দাবিতে ১৩০ জন শিল্পী একটা বিবৃতি দিয়েছেন যেটা হয়তো কালকে পত্রিকায় দেখবেন সবাই। আপনি যদি নামের লিস্ট দেখেন, তাহলে বুঝবেন কেন এটা আমাদের জন্য, আমাদের পরের জেনারেশনের জন্য একটা বিশেষ মানে বহন করে। এখানে এমন মানুষেরা আছেন যাদেরকে আপনি নিয়মিত বিবৃতিতে খুঁজে পাবেন না। এখানে মূল ধারা-বিকল্প ধারা-নতুন ধারা-পুরাতন ধারা নানা মত-পথের মানুষ আছেন। আমাদের মত ভিন্ন হতে পারে, পথ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু শিল্পীর স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা এক। আমাদের ভবিষ্যতের প্রশ্নে আমরা এক। এখন আমরা জানি, আমরা যখন এক হয়েছি, আর কোনো কিছুই ‘আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না’!”
ফারুকীর বিশ্বাস, আপিল কমিটি আগামী পরশু সুবিবেচনার পরিচয় দেবে। শিগগির ‘শনিবার বিকেল’ দর্শকদের কাছে যেতে পারবে। পাশাপাশি পোস্টে সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি। এতে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা, জাহিদ হাসান, মামুনুর রশীদ, ইরেশ যাকের, ইন্তেখাব দিনার, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইয়াদ হুরানি প্রমুখ।
কেএইচটি