৪ বিয়ে করেও সুখী হতে পারেননি কিশোর কুমার!
উপমহাদেশের কিংবদন্তি গায়ক, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং রেকর্ড প্রযোজক কিশোর কুমারের ৯২তম জন্মদিন আজ (বুধবার)। ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের সর্বাধিক সফল এবং চলচ্চিত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ নেপথ্য গায়ক হিসেবে বিবেচিত এই শিল্পীর জন্ম ১৯২৯ সালের ৪ আগস্ট। ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর অগণিত ভক্তকে কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তিনি।
প্রথাগত তালিম ছাড়াই বলিউডের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠা কিশোর কুমার ছিলেন বর্ণাঢ্য এক জীবনের অধিকারী। আইনজীবী কুঞ্জলাল গঙ্গোপাধ্যায় ও গৌরীদেবী দম্পতির ছোট ছেলে ছিলেন কিশোর কুমার। জন্মের পর তার নাম ছিল আভাস কুমার। ব্রিটিশ ভারতের সেন্ট্রাল প্রভিন্সের (আজকের মধ্যপ্রদেশ)-এর খণ্ডোয়া অঞ্চলে তার জন্ম।
বিজ্ঞাপন
কিশোর কুমার ব্যক্তিগত জীবনে ৪ বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। শোনা যায়, চারবারের দম্পত্য জীবনের পরেও ঠিক সুখী হতে পারেননি সংগীতের এই মহারথি।
১৯৫০ সালে সত্যজিৎ রায়ের ভাইঝি রুমা গুহ ঠাকুরতার সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন কিশোর কুমার। একজন অভিনেত্রী, গায়িকা ছাড়াও, সক্রিয় সমাজকর্মী হিসেবেও কাজ করেছিলেন রুমা। কলকাতা ইয়ুথ কয়্যারের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।
শোনা যায়, ১৯৫২ সালে ছেলে অমিত কুমারের জন্মের পর কিশোর কুমার চেয়েছিলেন রুমা বাড়িতেই থাকুন। যদিও স্ত্রী তার স্টারডমকে ছাড়তে চাননি। সেখান থেকেই কিশোর কুমার-রুমার মধ্যে মত বিরোধের সূত্রপাত। বিয়ের ৮ বছর পর ১৯৫৮ সালে তাদের সংসার ভেঙে যায়। দুজনের ঘরে একমাত্র সন্তান অমিত কুমারের জন্ম হয় ১৯৫২ সালে। অমিত কুমারও একজন প্রতিষ্ঠিত গায়ক।
রুমার সঙ্গে বিচ্ছেদের আগেই কিশোর কুমার মধুবালার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান বলে জানা যায়। ১৯৬০ সালে তিনি বিয়ে করেন মধুবালাকে। গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার এই বিয়ে মেনে নেয়নি। কিশোর কুমার-মধুবালার সেই দাম্পত্যও সুখের হয়নি। শোনা যায়, বিয়ের এক মাস পরেই গুরুতর অসুস্থ মধুবালা ফিরে যান তার নিজের বাংলোয়। চিকিৎসকরা জানান, মধুবালার হৃৎপিণ্ডে জন্মগত ছিদ্র রয়েছে, তিনি বড়জোর দু’বছর বাঁচবেন। ১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে প্রয়াত হন মধুবালা। অভিযোগ রয়েছে, তার সঙ্গে শেষ দিকে কিশোর কুমার যোগাযোগ রাখেননি।
কিশোর কুমারের তৃতীয় স্ত্রী যোগিতা বালী। মধুবালার মৃত্যুর কয়েক বছর পর যোগিতার প্রেমে পড়েন তিনি। যোগিতা শাম্মী কাপুরের প্রথম স্ত্রী গীতা বালির ভাইঝি। ১৯৭৬ সালে যোগিতাকে বিয়ে করেন কিশোর কুমার। তবে সেই বিয়ে স্থায়ী হয় মাত্র দুই বছর। গুঞ্জন রয়েছে, বিয়ের ঠিক পরপরই 'খোয়াব' সিনেমার শুটিংয়ে প্রথম দেখা হয় মিঠুন-যোগিতার। মিঠুন চক্রবর্তীর প্রেমে পড়েই নাকি কিশোর কুমারের কাছ থেকে দূরে সরে যান তিনি। এর ফলে একসময় চরমে ওঠে কিশোর কুমারের সঙ্গে মিঠুনের বিরোধ। মিঠুনের জন্য নাকি গান গাইতেও অস্বীকার করেছিলেন কিশোর।
কিশোর কুমারের চতুর্থ স্ত্রী দক্ষিণের অভিনেত্রী লীনা চন্দভরকর। বিয়ের মাত্র ১১ মাসের মধ্যে প্রথম স্বামীকে হারিয়েছিলেন লীনা। এরপর কাজের সুবাদেই কিশোর কুমারের সঙ্গে আলাপ। এক সময় দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবে ২১ বছরের বড় কিশোরের সঙ্গে বিয়েতে মত ছিল না তার পরিবারের। তার ওপর বাধা ছিল কিশোর কুমারের আগের তিন বিয়ে। পরিবার মত দিলেও সেই বিয়েতে বিলম্ব হয়। কারণ, তখনও কিশোর কুমার-যোগিতা বালির কাগজেকলমে বিচ্ছেদ হয়নি। যোগিতার সঙ্গে আইনি বিচ্ছেদের পরে ১৯৮০ সালে লীনাকে বিয়ে করেন কিশোর কুমার।
বিয়ের দুই বছর পর জন্ম হয় তাদের সন্তান সুমিত কুমার। কিশোরের কুমারের মৃত্যুর সময় সুমিতের বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর। জীবনের এই কঠিন সময়ে লীনার পাশে ছিলেন অমিত কুমার। তিনিই ছায়ার মতো আগলে রাখেন ভাই সুমিতকে।
সূত্র : জি ২৪ ঘণ্টা
আরআইজে