মুম্বাইয়ের পূর্ব বান্দ্রায় রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকিকে। এ ঘটনায় এখন তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদিকে ভারতের সাবেক এই মন্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে তারা লিখেছে, ‘আমাদের কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই। কিন্তু সালমান খান বা দাউদ ইব্রাহিমকে যে বা যারা সাহায্য করবেন তারা এখন থেকে দিন গুনতে শুরু করুন।’

অনেকদিন ধরেই লরেন্স বিষ্ণোইদের মূল নিশানায় বলিউড ভাইজান সালমান খান। বছর কয়েক আগে এক কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার ঘটনায় আইনি জটিলতায় পড়েন সালমান। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০১৮ সাল লরেন্স বিষ্ণোইয়ের এক সহযোগী সালমান খানকে হত্যার ছক আঁকে। বলে রাখা ভালো, বিষ্ণোই গোষ্ঠী কৃষ্ণসার হরিণকে পবিত্র বলে মনে করে।

যে কারণে প্রশাসনসহ অনেকের ধারণা, লরেন্স বিষ্ণোইদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগায় সালমান খানকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনার পরপরই সালমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাড়ির সামনে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটায় লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং।

পুলিশ সূত্রে খবর, ‘হিন্দু ডন’ হিসেবে নিজের পরিচিতি তৈরি করতে চাইছে লরেন্স বিষ্ণোই। দেশজুড়ে এই গ্যাংয়ের প্রায় ৭০০ সদস্য ছড়িয়ে রয়েছে। কুখ্যাত গ্যাংস্টার বিষ্ণোই এখন জেল খাটছেন। কিন্তু তার গ্যাং সক্রিয় রয়েছে বাইরে।

বর্তমানে এই গ্যাংয়ের নিশানায় কারা রয়েছেন, সেই তালিকাই প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজকাল।

১. সালমান খান:  সালমানের সঙ্গে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের বিবাদ অনেক বছরের। কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার অভিযোগ রয়েছে সালমানের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার প্রতিশোধ স্বরূপই বিষ্ণোই  দল তাকে একাধিকবার প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে। এরপর সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন সময় সালমানের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছে তারা। যেখানে এই নায়ককে সাবধানে থাকতে বলেছেন।

২. জিশান সিদ্দিকি: প্রয়াত এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকির পুত্র তথা বিধায়ক জিশান সিদ্দিকি। বাবা সিদ্দিকির হত্যার ঘটনায় যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের নাম কর্নেইল সিং এবং ধরমরাজ কাশ্যপ। একজন উত্তরপ্রদেশ এবং একজন হরিয়ানার বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে দু’জনই স্বীকার করে নিয়েছেন, তারা বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য। তাদের মুখ থেকেই জানা গেছে, বাবা সিদ্দিকির পাশাপাশি জিশান সিদ্দিকিকেও হত্যার ছক ছিল তাদের গ্যাংয়ের। 

৩. মুনাওয়ার ফারুকি: পেশায় কৌতুকশিল্পী তথা ‘বিগবস্‌ ১৭’র বিজেতা মুনাওয়ার ফারুকিও রয়েছেন বিষ্ণোইদের তালিকায়। জানা যাচ্ছে, লরেন্স বিশ্নোইদের দলের দুই দুষ্কৃতী একবার মুনাওয়ারের পিছু নিয়েছিলেন। দিল্লি পর্যন্ত মুনাওয়ারকে অনুসরণ করেছিল সেই দু’জন। সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লির একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন কৌতুকশিল্পী। কিন্তু মুনাওয়ারের ওপর হামলার পরিকল্পনা তাদের সফল হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থা মারফত এই হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ানো হয়েছিল মুনাওয়ারের নিরাপত্তা। তাই সে বারের মতো কৌতুকশিল্পীর ওপর হামলা করতে পারেননি তারা। এই ঘটনার পরে মুম্বাইতেও কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছেন মুনাওয়ার। 

৪. শাগানপ্রীত সিং: জনপ্রিয় পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসে ওয়ালার ম্যানেজের ছিলেন শাগানপ্রীত সিং। শোনা যাচ্ছে, বিষ্ণোইদের তালিকায় একেবারে উপরের দিকে নাম রয়েছে এই ব্যক্তির। 

৫. কৌশল চৌধুরী: বিষ্ণোইদের প্রধান শত্রু কুখ্যাত বমবিহা গ্যাংয়ের সদস্য কৌশল। বিষ্ণোইদের হিটলিস্টে এই ব্যক্তি যে থাকবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তার উপর বিষ্ণোই গ্যাংয়ের ভিকি মিডুখেরা হত্যার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র নাকি যোগান দিয়েছিল এই ব্যক্তি। 

৬. অমিত ডাগর: বমবিহা গ্যাংয়ের সদস্য কৌশল চৌধুরীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অমিত। ভিকি মিডুখেরা হত্যার পরিকল্পনায় নাকি কৌশলকে সাহায্য করেছিল এই ব্যক্তি। যে কারণে তিনিও রয়েছেন বিষ্ণোই গ্যাংয়ের হিটলিস্টে। 

এনএইচ