দর্শকদের ‘পাঠান’-এর তুলনায় বেশি পছন্দ হয়েছে এ মুহূর্তের সব থেকে আলোচিত সিনেমা ‘জওয়ান’। গত বৃহস্পতিবার সিনেমা মুক্তির দিনেই এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। দু’টিই বড় বাজেটের অ্যাকশন সিনেমা। কিন্তু ‘জওয়ান’ সিনেমাতে বাড়তি একাধিক মশলা রয়েছে, যা সব ধরনের দর্শকের মনকে আকর্ষণ করেছে। ফলে সিনেমা ব্যবসা বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, বক্স অফিসে শাহরুখ খান নিজেই আরও একবার তার নিজের নজির ভাঙতে চলেছেন।

সিনেমার গল্পটা যদি ঠিক না থাকে তাহলে প্রথম সারির অভিনেতা ও বিশাল বাজেট দিয়ে কিছুই হয় না। ‘পাঠান’ সিনেমাতে ‘র’-এর গোয়েন্দা শাহরুখ এবং ‘আউটফিট এক্স’ নামক এক সন্ত্রাসবাদী দলের মাথা জন আব্রাহামের মুখোমুখি দ্বৈরথকে কেন্দ্র করে গল্প এগিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ‘জওয়ান’ সিনেমার গল্পে রয়েছে একাধিক স্তর। বাবা-ছেলে, দুই প্রজন্মের গল্প যেমন রয়েছে। তেমনই রয়েছে অতীত এবং বর্তমানের সহাবস্থান।

যেকোনো সিনেমাতে শাহরুখ যে চালকের আসনে থাকবেন, তা অনুমেয়। ‘পাঠান’ সিনেমাতে শাহরুখের লুকস নিয়ে চর্চা হয়েছে। কিন্তু ‘জওয়ান’ সিনেমাতে দ্বৈত চরিত্রে বাদশা। তার ওপর সিনেমাতে রয়েছে তার একাধিক লুক। প্রিয় তারকাকে বারবার নতুন করে দেখতে চান দর্শক। সেখানে একই সিনেমাতে বিভিন্ন লুকে শাহরুখের উপস্থিতি অবশ্যই এ সিনেমার সাফল্যে অনুঘটকের কাজ করেছে।

শাহরুখ ‘পাঠান’ সিনেমাতে অভিনয়ে সফল হলেও জন-দীপিকার অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ডিম্পল কপাডিয়া ছাড়া বাকি পার্শ্বচরিত্রেরা সেইভাবে দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারেননি। সেখানে ‘জওয়ান’ সিনেমার পার্শ্বচরিত্রে একাধিক শক্তিশালী অভিনেতাকে দেখা গেছে। খলনায়ক হিসেবে বিজয় সেতুপতি বা পুলিশের চরিত্রে নয়নতারা মন্দ নন। সান্যা মলহোত্র বা সুনীল গ্রোভারের অভিনয় গল্পকে করেছে সম্পৃক্ত। ক্যামিয়ো চরিত্রে মন্দ নন সঞ্জয় দত্তও।

‘পাঠান’ সিনেমার কেন্দ্রে ছিল সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বার্তা। গল্পের চলন ছিল একরৈখিক। ‘জওয়ান’ সিনেমাতে কাহিনীর পরতে পরতে দেশের একাধিক বাস্তব চিত্রকে গুঁজে দিয়েছেন পরিচালক অ্যাটলি। ফলে দর্শকের আবেগও বাঁধ মানেনি। একদিকে রয়েছে অসাধু অস্ত্র ব্যবসায়ী, দেশদ্রোহিতার মতো বিষয়। অন্যদিকে রয়েছে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, কৃষকমৃত্যু এবং সর্বোপরি সরকার গঠনে নাগরিকদের ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। পাশাপাশি, নারী ক্ষমতায়ন এবং দুষ্টের দমনে রক্ত গরম হয়েছে দর্শকের। অনেকেই মনে করছেন, শাহরুখের সাম্প্রতিক কোনো সিনেমাতে এত চিত্র একসঙ্গে কখনো তুলে ধরা হয়নি।

‘পাঠান’ সিনেমাতে পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দ অনেক বেশি আধুনিক প্রযুক্তিকে তুলে ধরতে সময় ব্যয় করেছিলেন। এতে হলিউডের প্রভাব স্পষ্ট। সেখানে ‘জওয়ান’ অনেক বেশি ‘দেশি’। অ্যাটলি দক্ষিণী পরিচালক। বাণিজ্যিক সিনেমা হিট করানোর ফর্মুলা তার নখদর্পণে। সিনেমার দ্রুত গতির সিনেমাটোগ্রাফি এবং জমকালো অ্যাকশন দর্শককে আকৃষ্ট করে। সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে অনিরুদ্ধ রবিচন্দ্রের জমকালো সঙ্গীত। ফলে যা হওয়ার, সেটাই হয়েছে। দর্শক প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়েছে হাসিমুখে।

সূত্র : আনন্দবাজার

এফকে