আশির দশকের একেবারে শেষলগ্নে বলিউডে হাতেখড়ি হয়েছিল সালমান খানের। তারপর যত দিন গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে তার তারকা দ্যুতি। কিন্তু সাফল্যের চূড়ায় থাকতে থাকতেই আচমকা ছন্দপতন ঘটেছিল ‘সল্লুভাই’-এর। নানা বিতর্ক ঘিরে ধরেছিল তাঁকে। নায়ক থেকে রাতারাতি যেন ‘খলনায়ক’ হয়ে উঠেছিলেন। ধাক্কা খেয়েছিলেন বক্স অফিসেও। ফিল্মি ক্যারিয়ারে খাদের কিনারায় পৌঁছেছিলেন ভাইজান। এই অবস্থায় সালমানের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন পরিচালক সতীশ কৌশিক।

মঙ্গলবার প্রয়াত হয়েছেন সতীশ। অনেকের মতো তার প্রয়াণে ভেঙে পড়েছেন সালমানও। পরিচালকের শেষযাত্রায় সালমানের আবেগবিহ্বল চেহারা প্রকাশ্যে এসেছে। আর এর পরই চর্চায় এসেছে সালমানের ক্যারিয়ারে সতীশের অবদানের কথা।

১৯৮৯ সালে ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবির হাত ধরে বলিউডের নায়ক হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল সালমানের। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে ক্যারিয়ারে খানিকটা ভাটার মুখে পড়েছিলেন সালমান। তার কয়েকটি ছবি তেমনভাবে সাড়া ফেলেনি। সেই সময় একের পর এক সুপারহিট ছবি উপহার দিয়ে বক্স অফিস মাতিয়েছিলেন শাহরুখ খান।

এক দিকে, ক্যারিয়ারে হিট ছবির ভাটা, সেই সঙ্গে বিতর্ক— এই দুই মিলিয়ে বেগ পেতে হয়েছিল সালমানকে। ১৯৮৮ সালে রাজস্থানের জোধপুরে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শ্যুটিং করছিলেন সালমান। ওই ছবির শুটিংয়ের সময় কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার অভিযোগ উঠেছিল সালমানের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়। এই বিতর্ক থিতু হতে না হতেই বলিপাড়ায় রটে গিয়েছিল সালমান ও ঐশ্বরিয়া রাইয়ের প্রেমের গুঞ্জন।

সঞ্জয় লীলা বানসালির ছবি ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ ছবির সময় দুজনের প্রেমের শুরু। কিন্তু এই সম্পর্ক পরে তিক্ততায় পরিণত হয়। ঐশ্বরিয়াকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে সালমানের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় বি-টাউনে। সালমানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে ঐশ্বরিয়ার পরিবার। ২০০২ সালে মার্চ মাসে বিচ্ছেদ হয় এই তারকা জুটির। ছবির থেকেও তখন সালমানের ব্যক্তিজীবন খবরের শিরোনামে। এই সময় শাহরুখের সঙ্গেও তার মতবিরোধ তৈরি হয়।

ঐশ্বর্যার সঙ্গে বিচ্ছেদের কয়েক মাসের মধ্যেই আরও এক বিতর্কে জড়িয়েছিলেন সালমান। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুম্বইয়ের ফুটপাতে সালমানের বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় একজনের। জখম হন আরও ৩ জন। দুর্ঘটনার পর গাড়ি নিয়ে পালানোর অভিযোগ ওঠে নায়কের বিরুদ্ধে। এ জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাকে।

একের পর এক বিতর্ক, সম্পর্কে ভাঙন— রাতারাতি বলিউডের ‘ব্যাড বয়’ হয়ে উঠেছিলেন সালমান। এই সময়ই ভাইজানকে তার আগের সিংহাসন ফিরিয়ে দেন পরিচালক সতীশ কৌশিক। তৈরি হয় ‘তেরে নাম’ ছবি। ২০০৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল এই ছবি। সালমানের বিপরীতে নায়িকার চরিত্রে দেখা গিয়েছিল ভূমিকা চাওলাকে।

সালমানের ক্যারিয়ারে ‘তেরে নাম’ একটা মাইলফলক ছবি। কারণ, এই ছবির হাত ধরেই নায়কোচিত কায়দায় বলিপাড়ায় প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল সালমানের। ছবিতে সালমানের ‘রাধে’ চরিত্রে মজেছিলেন দর্শকরা। বিশেষত, ছবিতে সালমানের চুলের স্টাইল ওই সময় লাখ লাখ তরুণ অনুকরণ করেছিলেন।

ছবির গানও বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সবমিলিয়ে ‘তেরে নাম’ সালমানের ফিল্মি ক্যারিয়ার বাঁচিয়ে দিয়েছিল। অনেকেই বলে থাকেন, সতীশ কৌশিক যদি সেই সময় সালমানকে ‘তেরে নাম’ ছবিতে না নিতেন, তা হলে হয়তো ডুবেই যেত সালমানের ক্যারিয়ার।

তবে ‘তেরে নাম’ ছবি ঘিরেও সালমানকে নিয়ে বিতর্ক বেধেছিল। শোনা গিয়েছিল, ছবির সেটে নাকি কথা কাটাকাটি হয়েছিল নায়ক ও পরিচালকের। আর এর জেরে নাকি সতীশকে সপাটে চড় কষিয়েছিলেন সালমান। যদিও এই ঘটনার সত্যতা জানা যায়নি। পরে সতীশ জানিয়েছিলেন, এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তার ও সালমানের খুবই ভাল সম্পর্ক বলেও জানান। যার হাত ধরে বলিউডে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন সালমান, মঙ্গলবার সেই সতীশকে হারালেন ‘ভাইজান’।

ওএফ