সময়টা ১৯৯১ সাল। তখন তিনি কেবল কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কেকে হয়ে ওঠেননি। এক বেকার যুবক মাত্র। যে তার প্রেমিকা জ্যোতি লক্ষ্মী কৃষ্ণাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। কিন্তু সব প্রেমের মতো এই সম্পর্কেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রেমিকের বেকারত্ব। বিয়ের জন্য প্রেমিকার বাবা-মা শর্ত জুড়ে দেন, ছেলেকে চাকরি করতে হবে।

কিন্তু কৃষ্ণকুমারের মনে গানের স্বপ্ন। গান গেয়ে মানুষের মন জয়ের কল্পনা। সারাক্ষণ গান নিয়েই তার ধ্যানজ্ঞান। ওদিকে প্রেমিকা জ্যোতিকেও ছাড়তে পারবেন না। যেকোনো মূল্যে তাকে পেতে হবে।

অগত্যা গান ছেড়ে চাকরিজীবনেই পা রাখেন কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। একটি প্রতিষ্ঠানের সেলসে ৩ মাস কাজ করেছিলেন। কিন্তু গান যার হৃদয়ে বসতি গড়েছে, তার কি চাকরিতে মন বসবে! ঠিক তাই, তিনমাস পর চাকরি ছেড়ে ফের গানেই মনোনিবেশ করেন তিনি।

স্ত্রী জ্যোতির সঙ্গে কেকে

১৯৯১ সালে জ্যোতিকে বিয়ের তিন বছর পর ১৯৯৪ সালে মুম্বাইতে আসেন কেকে। নিজের ডেমো ভয়েস রেকর্ড বিভিন্ন সংগীত পরিচালকের কাছে নিয়ে যান এবং সুযোগ চান। বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল দিয়ে সেই সুযোগ আসে। বিভিন্ন ভাষায় তিনি প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জিঙ্গেলে কণ্ঠ দিয়েছিলেন।

সিনেমার গায়ক হিসেবে কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ অর্থাৎ কেকে’র অভিষেক হয় কিংবদন্তি এ আর রহমানের মাধ্যমে। তামিল সিনেমা ‘কাধাল দেসাম’-এ প্রথম গান গেয়েছিলেন কেকে। এরপর ১৯৯৯ সালে বলিউডে অভিষেক হয় তার। প্রথম হিন্দি গানটির নাম ‘তাড়াপ তাড়াপ কে’।

তারপরের ইতিহাসটা কম-বেশি সবারই জানা। বলিউডের সিনেমায় অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক হয়ে ওঠেন কেকে। তার সুরেলা কণ্ঠে বহু গান নন্দিত হয়েছে। কোটি শ্রোতার মন জয় করে নিলেও কেকে খুব বেশি পরিচিত ছিলেন না। বরং নিজের মতো আড়ালেই থেকে গেছেন।

শুধু তাই নয়, একের পর এক সুপারহিট গান গেয়েও বলিউডে নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছেন কেকে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ফিল্মফেয়ারে বেশ কয়েকবার মনোনয়ন পেলেও পুরস্কার পাননি একবারও। কিন্তু শ্রোতাদের কান থেকে মনে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে তার কণ্ঠ।

সংসার জীবনে দারুণ সুখী ছিলেন কেকে। জ্যোতিকে নিয়ে দীর্ঘ ৩১ বছরের সংসার। দুই ছেলে-মেয়ের জনক ছিলেন কেকে। মঙ্গলবার (৩১ মে) তাদেরকে ছেড়ে গায়ক উড়াল দিয়েছেন অনন্তলোকে।

কেআই/আরআইজে