জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মুঠোফোনে সিনেমা বানালেন মুণ্ডা তরুণ-তরুণীরা
সুন্দরবনঘেঁষা উপকূলবর্তী জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ‘মুণ্ডা’র বাস। এই জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কেমন তা উঠে এসেছে একাধিক সিনেমায়। আর সেসব সিনেমা বানিয়েছেন মুণ্ডা নৃগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরাই। সিনেমার চিত্রধারণে তারা ব্যবহার করেছেন মোবাইল ফোনের ক্যামেরা। সম্প্রতি মুঠোফোনে বানানো এসব চলচ্চিত্র কুড়িয়েছে প্রশংসা।
শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে শ্যামনগরে চলচ্চিত্রগুলো আমন্ত্রিত দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করা হয়। এদিন ছিল শ্যামনগরে বসবাসকারী মুণ্ডা জনগোষ্ঠীর জন্য মোবাইল ফোনে চিত্রধারণের মাধ্যমে নিজের গল্প নিজেই উপস্থাপন বিষয়ক কর্মশালার শেষ দিন। ছয় দিনব্যাপী এই কর্মশালায় চলচ্চিত্র নির্মাণের মৌলিক বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয় ১০ জন মুণ্ডা তরুণ-তরুণীকে।
বিজ্ঞাপন
তারা বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং মুণ্ডা জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব নিয়ে মোবাইলে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তাদের চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে বাঘ-বিধবা, বাল্যবিবাহ, সংস্কৃতি ও ভাষা, জীবিকার অভাব ও এর প্রতিকার থেকে শুরু করে স্থানচ্যুতির জীবনযন্ত্রণার গল্প। দেখা মিলেছে বাল্যবিবাহের ফলে সৃষ্ট যন্ত্রণাকাতর দাম্পত্যের গাঁথাসহ মুণ্ডাদের জীবনযুদ্ধের। পাশাপাশি নিজস্ব ঐতিহ্যকে রক্ষার আহ্বানও ফুটে উঠেছে এসব চলচ্চিত্রে।
২৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘কমিউনিটি ডিজিটাল স্টোরিটেলিং অ্যান্ড ডেল্টা ফিউচার্স ইন ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ অ্যান্ড ভিয়েতনাম (সিডিএসটি)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায়। ‘সিডিএসটি মোবাইল ফিল্মমেকিং ওয়ার্কশপ উইথ মুণ্ডা কমিউনিটি’ শীর্ষক এই কর্মশালার আয়োজন করে ঢাকা আন্তর্জাতিক মোবাইল চলচ্চিত্র উৎসব (ডিআইএমএফএফ)। মুণ্ডা জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাবকে মূল উপজীব্য করে আয়োজন করা হয় এই কর্মশালার।
এই প্রথমবারের মতো শ্যামনগরে বসবাসকারী মুণ্ডা জনগোষ্ঠীর জন্য এ ধরনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হলো। কর্মশালায় চলচ্চিত্র নির্মাণের মৌলিক বিষয়ের ওপর ধারণা দেওয়া হয়।
কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যতম আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) গণমাধ্যম শিক্ষণ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডক্টর জুড উইলিয়াম হেনিলো তার পাঠানো বার্তায় অংশগ্রহণকারীদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। অন্যতম আয়োজক প্রতিষ্ঠান ডারহাম ইউনিভার্সিটির প্রকল্প গবেষক আনহেলো থিওক্যারিস তার পাঠানো বক্তব্যে সিডিএসটি প্রকল্পটির নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মণ্ডল, ইনিশিয়েটিভ ফর কোস্টাল ডেভেলপমেন্টের (আইডিসি) প্রতিষ্ঠাতা আশিকুজ্জামান আশিক ও শ্যামনগরের আঞ্চলিক উন্নয়ন সংস্থা পিপলস রিসার্চ অন গ্রাসরুট ওনারশিপ অ্যান্ড ট্র্যাডিশনাল ইনিশিয়েটিভের (প্রগতি) প্রতিষ্ঠাতা আশেক-ই-এলাহী উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্পটির অর্থায়নে রয়েছে যৌথভাবে ইউকেআরআই জিসিআরএফ লিভিং ডেল্টাস হাব এবং ডারহাম ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব হ্যাজার্ড, রিস্ক অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স (আইএইচআরআর)। প্রকল্পের অধীনে এই কর্মশালাটির আয়োজনে ছিল যৌথভাবে ইউল্যাব এবং শ্যামনগরের আঞ্চলিক উন্নয়ন সংস্থা প্রগতি।
ডিআইএমএফএফ-এর পক্ষ থেকে এর উপদেষ্টা ডক্টর আব্দুল কাবিল খান ও নির্বাহী উপদেষ্টা সৈয়দা সাদিয়া মেহজাবিন কর্মশালাটি পরিচালনা করেন। আয়োজনটির সমন্বয়ে ইউল্যাবের পক্ষ থেকে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল কাদের, জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মুহাম্মদ আমিনুজ্জামান এবং প্রগতির পক্ষ থেকে ছিলেন জনাব আশেক-ই-এলাহী।
এইচকে