যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সংগীতশিল্পী তাশরীফ খান
তরুণ সংগীতশিল্পী তাশরীফ খান। নিজের গড়া ব্যান্ড ‘কুঁড়েঘর’সহ এরইমধ্যে নতুন প্রজন্মের কাছে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। তার প্রতিটি গানই প্রকাশের পর দ্রুত সাড়া ফেলে সামাজিক মাধ্যমে। নিয়মিত গানের পাশাপাশি সমসাময়িক নানা বিষয়কে কণ্ঠে ধারণ করেই এতদূর এসেছেন এই গায়ক। পাশাপাশি অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সেসব মানবিক কাজ এবং এর সঙ্গে জড়ানোর গল্প ঢাকা পোস্টের সঙ্গে শেয়ার করেছেন তিনি।
তাশরীফ বলেন, ‘মানুষকে সহযোগিতা করতে শিখেছি আমার আব্বুর কাছ থেকে। আব্বুকে দেখেছি নিজের গায়ের শার্ট খুলে অসহায় মানুষকে দিয়ে দিতে। আমার মনে আছে, ছোটবেলায় ভিক্ষুক বাসায় এলে আমার বাসা থেকে তাদের পেট ভরে খাওয়ানো হতো আর আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কখনো ভাতের চাল কিংবা কখনো আমার জমানো টাকা দিয়ে দিতাম। খুব ছোটোবেলা থেকেই অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে আনন্দ পেতাম আমি।’
বিজ্ঞাপন
একাধিক প্রজেক্টের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথাও তুলে ধরেন এই গায়ক, “যখনই যেখানে সামর্থ হয়েছে চেষ্টা করেছি অসহায় মানুষদের উপকার করার। সেটা ছোট হোক কিংবা বড়। এক্ষেত্রে প্রথমেই বলব ‘ইচ্ছা পূরণ’ নিয়ে, যেটা ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্নের একটা প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টে মূলত আমি গরিব পথশিশু, বৃদ্ধ কিংবা যে কোন বয়সের অসহায় মানুষের একদিনের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করে থাকি। পাশাপাশি চেষ্টা করি উক্ত ব্যক্তিকে এমন একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিতে যেটার মাধ্যমে তিনি আয় রোজগার করে সংসার চালতে পারেন। আরেকটা প্রজেক্ট করেছিলাম ‘আমরা চাইলেই সম্ভব’ নামে। করোনাকালে লম্বা সময় ধরে চলা লকডাউনের মাঝে লাখ লাখ মানুষ কাজ হারাল, অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার অসহায় হয়ে পড়ল আর গরিব মানুষগুলোর ঘরে খাদ্য সংকট দেখা দিলো। সেই সময় আমি ‘তাশরীফ স্কোয়াড’ নামে একটা টিম বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রায় ১৪ লাখ টাকার ফান্ড কালেক্ট করে অসহায় পরিবারগুলোর ঘরে ঘরে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে এসেছি।”
এই তরুণ সংগীতশিল্পী বলেন, “আমি শতভাগ চেষ্টা করি নিজের আয়কৃত অর্থ থেকে মানুষকে সাহায্য করার। গান গেয়ে যে দু-চার পয়সা আয় করি সেখান থেকেই সাধ্যমত চালিয়ে যাচ্ছি আমার ‘ইচ্ছা পূরণ’ প্রজেক্ট । আর করোনার সময়ে করা প্রজেক্টটা আসলে আমার সামর্থের মাঝে ছিল না তাই মানুষের কাছ থেকে ফান্ড কালেক্ট করতে হয়েছে। দেখুন, মানুষ আমায় বিশ্বাস করে, আমিও চেষ্টা করি এই বিশ্বাসের মর্যাদা রেখেই মানুষের উপকারে কাজ করে যেতে। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতেও যে কোন প্রয়োজনে মানুষকে পাশে পাবো ইনশাআল্লাহ।”
তাশরীফের ভাষ্য, ‘মানুষের উপকার করে আমি প্রচণ্ড আনন্দ পাই এবং কখনোই এই আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে চাইব না। আমার একটা স্বপ্ন আছে। কোনদিন সামর্থ হলে একটি বৃদ্ধাশ্রম এবং এতিমখানা একইঙ্গে স্থাপন করব। যেখানে এতিম বাচ্চাগুলো তাদের মা-বাবা থেকে বঞ্চিত আদরের কিছুটা অংশ পাবে আর বৃদ্ধ মানুষগুলো তাদের সন্তান সমতুল্য কিংবা নাতি-নাত্নির মতো বাচ্চাগুলোর কাছ থেকে একটা সঙ্গ পাবে। সত্যি বলতে মন থেকে বারবার এটাও চাই, এই বৃদ্ধাশ্রম কিংবা এতিমখানাগুলো যেন আমাদের দেশে আর প্রয়োজন না হয়। কিন্তু বাস্তবতা এড়ানোর সামর্থ তো আমাদের নেই।’
আরআইজে