বাংলাদেশের তিন গুণী ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও আজমেরী হক বাঁধন। দেশের শোবিজে তাদের অবস্থান অনেক আগে থেকেই পোক্ত। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে টালিউডেও সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন জয়া। চলতি বছর সৃজিত মুখার্জির ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’ দিয়ে ওপার বাংলায় পা রাখেন বাঁধন। সবশেষ মিথিলাও যুক্ত হয়েছেন কলকাতার শোবিজে।

এই তিন তারকাকে নিয়েই এখন চিন্তিত কলকাতার অভিনেত্রীরা! প্রকাশ্যে না বললেও তাদের নিয়ে টলিউডের অনেক অভিনেত্রীর ক্ষোভের কথা অজানা নয়।

‘আবর্ত’ দিয়ে কলকাতায় যাত্রা শুরু হয়েছিল জয়া আহসানের। তার পর ‘রাজকাহিনী’, ‘বিসর্জন’, ‘বিজয়া’, ‘কণ্ঠ’, ‘বিনিসুতোয়’... জয়ার আরও গোটা তিনেক সিনেমা এখনও মুক্তির অপেক্ষায়। ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’তে বাঁধনের কাজ প্রশংসিত হয়েছে। তাকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন কলকাতার অনেক পরিচালকই। রাজর্ষি দে পরিচালিত ‘মায়া’, রিঙ্গোর ‘আ রিভার ইন হেভন’-এ রয়েছেন মিথিলা।

এই তিন নায়িকা যে ঘরানার সিনেমায় কাজ করছেন, তাতে এর আগে সাধারণত পাওলি দাম, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, রাইমা সেনদের দেখা যেত। মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা চাহিদা কমে যাওয়ায় শুভশ্রী, শ্রাবন্তী, মিমি চক্রবর্তী, নুসরাত জাহানেরাও অন্য ধারার সিনেমার দিকে ঝুঁকেছেন। ফলে অল্প পরিসরে প্রতিযোগিতা বেশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নায়িকার ক্ষোভ, ‘এমন অনেক চরিত্রই বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের দেওয়া হয়, যেটা এখানকার যে কেউ করতে পারত।’ এমন তথ্য জানিয়েছে কলকাতার আনন্দবাজার।

জয়া অবশ্য এই প্রতিযোগিতা নিয়ে ভাবতে রাজি নন। তার মতে, কাজের সুযোগ সকলেরই আছে। আনন্দ প্লাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার বক্তব্য, ‘‘সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা তো ভালোই। আমার মতে শিল্পের কোনও সীমারেখা থাকা উচিত নয়।’

শিল্পের আদানপ্রদানের ওপরে জোর দিলেন মিথিলাও। তিনি আনন্দবাজারকে বলেন, ‘কেউ কারও কাজ, জায়গা কেড়ে নিতে পারে বলে মনে হয় না। সবাই নিজের যোগ্যতা দিয়ে কাজ পাচ্ছেন। আমি বৈবাহিক সূত্রে কলকাতায় থাকছি, তাই এখানেই কাজ করছি এখন। তবে আমি এখানে সদ্য কাজ শুরু করেছি। আমাকে বোধহয় কারও প্রতিযোগী হিসেবে দেখাটা ঠিক হবে না।’ অভিনেত্রী মনে করিয়ে দেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেকেই বাংলাদেশে গিয়ে কাজ করেছেন।

বাংলাদেশের প্রজেক্ট ‘কমান্ডো’তে কাজ করেছেন দেব। আবার ওপারের একাধিক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন বাংলাদেশের নুসরাত ফারিয়া। অভিনেতারা অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে গিয়ে কাজ করবেন এটা স্বাভাবিক। পাওলি, স্বস্তিকারা যেমন বলিউডে নিয়মিত কাজ করছেন। বড় ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগও বেশি। আনন্দবাজারের মতো, ওপার বাংলার অভিনেতারা বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ করলেও, তা সংখ্যায় কম। বাংলাদেশে কাজ করেছেন কলকাতার এমন এক নায়িকা বলেন, ‘এখান বাংলাদেশের শিল্পীরা যত সুযোগ পান, সেই তুলনায় ওপার বাংলায় আমাদের কাজের সুযোগ বেশ কম।’

তবে আজমেরী হক বাঁধন মনে করেন, ‘এই চর্চাগুলো অভিনেত্রীদের ওপরে বাড়তি চাপ তৈরি করে। অনেকে বলছেন, বাংলাদেশ থেকে অভিনেত্রীরা এসে কাজ করায় টলিউডের কিছু অভিনেত্রীর মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আসলে আমাদের সমাজ এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে দেয়। বিশেষ করে নারীদের ওপরেই বেশি চাপ তৈরি করা হয়। কেন এই চাপগুলো আমাদের নিতে হবে? এগুলো এড়িয়ে সদর্থক দিকগুলো ভাবলে, সকলেরই ভালো হবে। সকলে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবেন। কথাটা কলকাতা-বাংলাদেশ সব ইন্ডাস্ট্রির জন্যই বলছি।’

আআইজে