পরীমণি

জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমণিকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং যে প্রক্রিয়া চলছে, তা জনমনে সংশয় সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পীরা।

শনিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘শিল্পীর পাশে’ ব্যানারে সমাবেশে তারা এ মন্তব্য করেন। পরীমণির জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে সমাবেশে উপস্থিত শিল্পীরা দফায় দফায় পরীকে রিমান্ডে নেওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন।  

আরও পড়ুন : হিংসা ও লালসার শিকার পরীমণি

‘আইনের রক্ষকেরা আইন ভঙ্গ করেছেন’ মন্তব্য করে সভায় চলচ্চিত্র পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলেন, পরীমণিকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, যেভাবে দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে এবং যেভাবে ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ জন্য উসকে দেওয়া হচ্ছে তা বেআইনি। আইন সবার জন্য সমান হোক। 

সমাবেশে নাট্যব্যক্তিত্ব ঝুনা চৌধুরী বলেন, পরীমণি কত বড় মাফিয়া যে এলিট ফোর্সকে বিশাল বাহিনী নিয় যেতে হলো? যেসব শিল্পীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে, তারা আদালতে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগেই যে ধরনের কটূক্তি ও অশ্রাব্য কথাবার্তা বলা হচ্ছে, তার নিন্দা জানাই। 

সমাবেশে অভিনেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরীমণি ইস্যুর অন্তরালে কারা আছেন? ভীষণ শক্তিশালী একটি পক্ষ এগুলো করাচ্ছে। এটি ভীষণভাবে অমানবিক একটি প্রক্রিয়া। 

আরও পড়ুন : পরীমণি ইস্যুতে প্রতিবাদের আওয়াজ উঠছে

তিনি বলেন, দেশে লুটপাট ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। এসব ভুলিয়ে রাখতে সবচেয়ে ভালো উপাদান হচ্ছে পরীমণির মতো একজন নারী।

অভিনেতা ও নির্দেশক মোহাম্মদ বারী বলেন, পরীমণি ইস্যু যা হচ্ছে তা সংশয় সৃষ্টি করছে। পরীর বিরুদ্ধে যে ধরনের মামলা তাতে কখনোই তিনবার রিমান্ডে নেওয়ার নজির পাওয়া যায় না। বিষয়টি সংশয়ের। 

‘শিল্পীর পাশে’ ব্যানারের উদ্যোক্তা আহ্বায়ক এবং লেখক ও নাট্যনির্মাতা মোস্তফা মনন বলেন, যেকেউ অপরাধ করলে যথাযথ বিচার হবে। কিন্তু পরীর বিরুদ্ধে অভিযোগটা কী? পরী কি কোনো রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ করেছেন? আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, মাদক মামলা দিয়ে বারবার তার রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে।

মনন বলেন, পরীমণি দেশের একজন জনপ্রিয় শিল্পী। আমরা তার জন্য ন্যায়বিচার চাই। তিনি যেন কোনো গোষ্ঠী বা চক্রের হিংসা ও লালসার শিকার না হন রাষ্ট্রকেই তা নিশ্চিত করতে হবে। 

তিনি বলেন, আমরা একজন শিল্পীর পাশে দাঁড়িয়েছি। কোনো শিল্পী যখন অন্যায়ের শিকার হন, তার যখন সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমরা পাশে দাঁড়াই। শিল্পীর পাশে না দাঁড়ালে শিল্পের বিকাশ ঘটবে না, হয়তোবা টিকবে না। শিল্প মুখ থুবড়ে পড়লে একটা জাতি উগ্র হতে সময় লাগবে না। তাই ‘শিল্পীর পাশে’ গ্রুপ ন্যায়বিচারের স্বার্থে ভবিষ্যতেও কর্মসূচি ঘোষণা করবে। 


 
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, এ সমাজ পুরুষতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদীদের। তারা সুযোগ পেলেই নারীদের ব্যবহার করে, আর যখন বিপদে পড়ে তখন নারীদের ঠেলে দেয়। দেশে এর চেয়েও বড় দুর্নীতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেগুলোর বিচার হচ্ছে না। 

বক্তারা বলেন, পরীমণির সঙ্গে যা হচ্ছে তা অমানবিক। যে রাষ্ট্র শিল্পীদের সম্মান দিতে জানে না, সে রাষ্ট্রের জন্য খুব খারাপ সময় অপেক্ষা করছে।

মানববন্ধনে শিল্পী-নির্মাতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন চলচ্চিত্র নির্মাতা নোমান রবিন, গাজী মাহবুব, অপরাজিতা সঙ্গীতা, উম্মে হাবিবা প্রমুখ। অভিনয়শিল্পী আজাদ আবুল কালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন নির্মাতা শহীদুন নবী, সেতু আরিফ, অভিনেত্রী অনামিকা যুথি, সংস্কৃতিকর্মী রোম্মান রশিদ খান প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট রাতে প্রায় চার ঘণ্টার অভিযান শেষে বনানীর বাসা থেকে পরীমণি ও তার সহযোগী দীপুকে আটক করে র‍্যাব। এ সময় পরীমণির বাসা থেকে বিভিন্ন মাদক জব্দ করা হয়। ৫ আগস্ট র‍্যাব-১ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য আইনে পরীমণি ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে। এরপর তৃতীয় দফায় রিমান্ড শেষে শনিবার (২১ আগস্ট) পরীমণিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। 

এইচকে