‘ক্ষমা চাই কুলসুম…’
“গাড়িতে বসে বারবার কুলসুমের মুখখানা ভেসে উঠছিল চোখের সামনে, কানে বাজছিল ওর মুখের ‘ভাইয়া’ ডাক। মনের অজান্তেই বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছে। লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন, কোনো কিছুই আমাকে কুলসুমের মুখটা ভুলতে দিচ্ছে না”
বেদনাহত মন নিয়ে কথাগুলো লিখেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। কুলসুম নামের এক গৃহপরিচারিকার মৃত্যুতে তার হৃদয় ভারী হয়ে উঠেছে। সেই দুঃখ কিছুটা প্রকাশ করলেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে।
বিজ্ঞাপন
চঞ্চল জানান, কুলসুম ছিলেন অভিনেত্রী শাহনাজ খুশির বাসার কাজের সহযোগী। দীর্ঘ দিন তিনি খুশির বাসায় কাজ করেছেন। একটি ছোট অপারেশনের জন্য সম্প্রতি কুলসুম হাসপাতালে ভর্তি হন। অপারেশন শেষে আর পৃথিবীর আলো দেখেননি তিনি। না ফেরার দেশে চলে গেছেন সবাইকে ছেড়ে।
কুলসুমকে নিজের বোনের মতোই মনে করতেন চঞ্চল। তার সম্পর্কে অভিনেতা লিখেছেন, “কুলসুম জানত, আমি গরম গরম পরোটা আর ডিম ভাজি পছন্দ করি। কুলসুম জানত আমি চায়ে কতটুকু চিনি খাই, কুলসুম জানত আমার পানির গ্লাসে কতটুকু ঠান্ডা পানি মেশাতে হবে। কুলসুম আমাকে ‘ভাইয়া’ ডাকত। অসম্ভব মায়া আর ভালোবাসা ছিল আমার প্রতি। কুলসুম আমার আপন কেউ ছিল না, কিন্তু সে ছিল আপনের চেয়ে আপন।”
চঞ্চল জানান, শাহনাজ খুশির কাজে সহযোগিতা করতেন কুলসুম। কিছুটা স্বচ্ছল জীবন যাপনের আশায় কয়েক বছর সৌদি আরবে কাজ করে দুই সপ্তাহ আগেই দেশে ফিরেছিলেন তিনি। চঞ্চল বলেন, ‘যে কয় বছর কুলসুম সৌদিতে ছিল, নিয়মিত খুশির সাথে যোগাযোগ রাখত, আমার পরিবারের খোঁজও নিত খুশির কাছ থেকে। কতটা দ্বায়িত্বশীল, সহজ-সরল ভালো মানুষ হলে, এরকম প্রিয় মানুষগুলোকে মনে রাখা যায়; কুলসুম তার প্রমাণ।’
অতীতের একটি ঘটনা শেয়ার করে চঞ্চল লিখেছেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে, দেশে থাকতে কুলসুম অসুস্থতার কারণে খুশির বাসায় কয়েকদিন আসতে পারেনি। খুশির সাথে আমিও ওর বাসায় ওকে দেখতে গিয়েছিলাম। কুলসুম তখন বিশ্বাস করতে পারেনি যে, আমি ওকে দেখতে ওর বাসায় যাবো। দেশে ফিরে আসার পরও সে খুশির বাসায় দেখা করতে এসেছিল সবার সাথে। সামনের মাস থেকে আবার খুশির বাসায় কাজ শুরু করবে এমনটাই কথা ছিল। কিন্তু আজ সকালে খুশি আমাকে ফোন করে জানাল, কুলসুম নেই।’
চঞ্চল আরও লিখেছেন, ‘অনেক আপনজনের মৃত্যুও আমাকে এতটা ব্যথিত করেনি। সংবাদটা শোনার পর শুটিং কাজে বের হয়ে পড়ি। গাড়িতে বসে বার বার কুলসুম এর মুখখানা ভেসে উঠছিল চোখের সামনে, কানে বাজছিল ওর মুখের ‘ভাইয়া’ ডাক। মনের অজান্তেই বার বার চোখ ভিজে যাচ্ছে। লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন, কোনো কিছুই আমাকে কুলসুমের মুখটা ভুলতে দিচ্ছে না। কুলসুমের জন্য আমরা কিছুই করতে পারলাম না। খুব গোপনে, ভয়ে কুলসুম আমাদের কাছ থেকে পালিয়ে গেল চিরতরে।’
শাহনাজ খুশি, তার স্বামী বৃন্দাবন দাস এবং তাদের সন্তানরাও কুলসুমের মৃত্যুতে স্তব্ধ। তাদের কথা উল্লেখ করে চঞ্চল লিখেছেন, ‘আমি শুটিং সেটে বসে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি দিব্য, সৌম্য, বৃন্দাবনদা আর খুশির চোখের জল। তাহলে কি কুলসুমকে আমরা বেশি ভালোবাসতাম, নাকি কুলসুম আমাদেরকে? ক্ষমা চাই কুলসুম, তোমাদেরকে আমরা কখনই এতটা ভালোবাসতে পারি না! যতটা তোমরা আমাদের বাসো! এবার তুমি শান্তিতে ঘুমাও কুলসুম।’
কেআই/আরআইজে