চলতি বছরে দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পী জিনাত সানু স্বাগতা। দীর্ঘদিনের প্রেমিক ও বন্ধু হাসান আজাদের গলায় মালা দেন তিনি। 

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে স্বাগতা জানান, বিয়ের আগে হাসানের সঙ্গে ১ বছর লিভ টুগেদারে ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই দু’জনে সিদ্ধান্ত নেন বিয়ের। 

স্বাগতা বলেন, ‘আমি আর হাসান এক বছর লিভ টুগেদার করেছি। তারপর দু’জন দু’জনকে পার্টনার হিসেবে পছন্দ করেছি।’

অভিনেত্রী জানান, তাদের লিভ টুগেদারের সিদ্ধান্তে পরিবারের কোনো সমস্যা ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন লিভ টুগেদার করেছি, আমাদের দু’জনের বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে কোনো সমস্যা ছিল না। এমনকি আমার ভাই-বোনও বলেছে, কেউ যুক্তরাজ্যে থেকে আসলো, তুমি বিয়ে করে ফেললা, এরপর জীবনটা শেষ হয়ে গেল...তার চেয়ে ভালো একসঙ্গে থেকে দেখো, সারাজীবন থাকতে পারবে নাকি। তারপর সিদ্ধান্ত নিও।’

স্বাগতা আরও বলেন, ‘সমাজও আমাদের বিষয়টা মেনে নিয়েছে। প্রথমে একটু সময় নিয়েছে কিন্তু পরে বিষয়টা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আমি মনে করি, আমাদের সমাজও পরিবর্তন হচ্ছে। ডিভোর্স নরমালাইজ হচ্ছে, লিভ টুগেদারও নরমালাইজ হবে।’

এদিকে স্বাগতার এমন বক্তব্যের পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরম সমালোচনার শুরু হয়। অনেকেই বর্তমান সমাজে ‘লিভ টুগেদার’নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলেন। কেউ কেউ অভিনেত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারেরও অনুরোধ জানান। 

এসব আলোচনার মাঝেই শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) অভিনেত্রী স্বাগতাকে প্রকাশে ক্ষমা চাইতে আইনী নোটিশ পাঠিয়েছেন মুহম্মদ আরিফুল খবির নামের এক ব্যক্তি। খবিরের পক্ষে অভিনেত্রীকে আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহম্মদ মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী। সেখানে বলা হয়েছে, প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে স্বাগতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নোটিশে বলা হয়েছে, ‘আপনি (স্বাগতা) হাসান আজাদ নামক একজন ব্যক্তির সঙ্গে লিভ টুগেদার করিয়াছেন বলিয়া স্বীকার করেন এবং যাহা বিগত ১ (এক) বছর যাবৎ করিয়াছেন তাহাও প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। পাশাপাশি লিভ টুগেদার করিবার জন্য উৎসাহ প্রদান করেন। আপনি একজন মুসলমান ধর্মাবলম্বী হওয়ায় আপনার জানা আছে বিবাহের পূর্বে নারী ও পুরুষের মধ্য সহবাস বা লিভ টুগেদার করা সম্পূর্নরুপে হারাম। আপনি উক্ত হারাম বিষয়টি নিজে করিয়া অপরকে করিবার জন্য উৎসাহ প্রদান করিতেছেন। যাহার কারণে সমাজে ব্যভিচারের মাত্রা বৃদ্ধি পাইয়া সমাজে এক বিশৃঙ্খলার পরিবেশ সৃষ্টি হইবে।

নোটিশে আরও বলা হয়, ‘আপনার উক্তরুপ বিবৃতির কারণে মুসলমান ধর্মাবলম্বীগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত প্রদান করিয়াছে। যেহেতু আমার মোয়াক্কেল একজন ধর্মপ্রান মুসলমান হওয়ার কারণে আমার মোয়াক্কেলের ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত লাগিয়াছে। যাহার কারণে সংক্ষুদ্ধ হইয়া আপনার প্রতি অত্র নোটিস প্রেরণ করিয়াছে।’

উক্ত নোটিশে জানানো হয়েছে, ‘অত্র নোটিস প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে আপনার উক্ত বক্তব্য প্রত্যাহার করিয়া প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইবেন। তাহা আমার মোয়াক্কেলকে অবহিত করিবেন। অন্যথায় আমার মোয়াক্কেল আপনার ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতদানকারী উক্ত বিবৃতির জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। যাহার দায়ভার আপনার উপর বর্তাইবে।’

এদিকে এ ঘটনায় এখনও নিজের বক্তব্যে অনড় স্বাগতা। নোটিশের জবাবে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে লিভ টুগেদারে উৎসাহ দিইনি। এটা যার যার ব্যক্তিগত রুচি ও পছন্দের ব্যাপার। আমার আগেও অনেকে লিভ টুগেদার করেছেন। আমার কথায় কেউ উৎসাহী হয়ে লিভ টুগেদার করবে বলে আমি মনে করি না।’

তবে লিভ টুগেদারের জন্য নিজের প্রথম সংসার ভাঙনের দায় দেখছেন স্বাগতা। তিনি বলেন, ‘দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিজেদের সম্মতিতে লিভ টুগেদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমার ভুলটা কোথায়? আমার প্রথম বিয়েটা তো ওয়ার্ক করে নাই। বিয়ে নিয়ে আমার মধ্যে ভয়-ভীতি কাজ করছিল, যদি আগেরবারের মতো আমাকে অত্যাচার সহ্য করতে হয়! আবার যদি একই রকম ঘটনা ঘটে? এ কারণে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেদের ভালোভাবে বুঝে নিয়েছি।’

এরপর যিনি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন তার উদ্দেশে অভিনেত্রী বলেন, ‘যার অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে, তাকে অনুরোধ করবো, তিনি যেন তার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নিয়ম মেনে চলেন, আমার নিয়ম তাকে মানতে হবে না। আমি কোন বাস্তবতায় কী করেছি, সেটা তিনি বুঝতে পারবেন না।’

উল্লেখ্য, এর আগে দীর্ঘ ৭ বছর প্রেমের পর চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামানকে বিয়ে করেন স্বাগতা। ছয় বছর সংসারের পর ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিচ্ছেদ হয় তাদের। বিচ্ছেদের কয়েক বছর পর লন্ডন প্রবাসী হাসান আজাদের গলায় মালা দেন তিনি। 

এনএইচ