নব্বই দশকের জনপ্রিয় গায়ক মনি কিশোরের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রামপুরা টিভি সেন্টার রোডের ৩৩৫ নম্বর বাড়ি থেকে শিল্পীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের ধারণা, তিন-চারদিন আগেই গায়কের মৃত্যু হয়েছে। মরদেহটি ফ্ল্যাটে পড়ে থাকার একপর্যায়ে ফুলে ফেঁপে ওঠে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে রামপুরা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান আকন বলেন, ৩৩৫ নম্বর বাড়ির একটি ফ্লাটে মনি কিশোর একাই থাকতেন। গত কয়েক দিন ধরে তিনি বাসা থেকে বের না হওয়ায় বাড়ির মালিক বিষয়টি সন্দেহ করে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে। শুনেছি তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।

এদিকে মনি কিশোরের মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠেছে, তার মরদেহ কি দাফন করা হবে?

কারণ ব্যক্তিগত জীবনে এই শিল্পী সনাতন ধর্মালম্বী ছিলেন। তবে নব্বইয়ের দশকে মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। এরপর গত দেড় যুগ আগে সেই সংসারে বিচ্ছেদ হয়। 

বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকায় একাই জীবনযাপন করছিলেন এই গায়ক। তার একমাত্র মেয়ে নিন্তি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তার কাছেই মনি কিশোর জানিয়ে গেছেন, মৃত্যুর পর যেন মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। 

এ বিষয়ে একটি সংবাদমাধ্যমকে মনি কিশোরের বড় ভাই অশোক কুমার বলেন, ‘মনি বেঁচে থাকা অবস্থায় তার দাফনের বিষয়টি একমাত্র মেয়ে নিন্তিকে জানিয়েছিলেন। মেয়েও জানিয়েছে, তার বাবাকে যেন দাফন করা হয়। এমনটাই নাকি সে বলে গিয়েছিল। মেয়েকে যেহেতু বলে গিয়েছে, তাই তার ইচ্ছামতো দাফন করা হবে। আমরা অন্য কোনো সিদ্ধান্তে যাব না।’

কোথায় দাফন করা হবে, জানতে চাইলে অশোক কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের সেভাবে কোনো চাওয়া নেই। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। এরপর তারাই সিদ্ধান্ত নেবে, কোথায় মরদেহ দাফন করা হবে।’

এদিকে মনি কিশোরের মৃত্যু সম্পর্কে তার ভাই বলেছেন, ‘মনি নানা রোগে ভুগছিলেন। এর মধ্যে হার্টের সমস্যা যেমন ছিল, তেমনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টের সমস্যাও। কয়েক মাস ধরে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ৯০ দশকের জনপ্রিয় শিল্পী মনি কিশোর। ক্যারিয়ারে পাঁচ শতাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। রেডিও, টিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হলেও এসব মাধ্যমে গান গেয়েছেন অল্প। মূলত অডিওতে গান করেছেন বিরামহীন। ৩০টির বেশি একক অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে মনি কিশোরের। যার প্রায় সবগুলোই ছিলো হিট।

তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘কী ছিলে আমার’, ‘সেই দুটি চোখ কোথায় তোমার’, ‘তুমি শুধু আমারই জন্য’, ‘মুখে বলো ভালোবাসি’, ‘আমি মরে গেলে জানি তুমি’ ইত্যাদি। তার সবচেয়ে শ্রোতাপ্রিয় গান ‘কী ছিলে আমার’ তারই সুর করা ও লেখা। ২০টির মতো গান লিখেছেন ও সুর করেছেন মনি কিশোর।

এনএইচ