সরলপুর ব্যান্ডের বহুল আলোচিত গান ‘যুবতি রাধে’। গানটি নিয়ে চলমান বিতর্কের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ দায়ের করলো ব্যান্ডটি। ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ শীর্ষক গান প্রকল্পে তারকা শাওন ও চঞ্চলের কণ্ঠে গানটি হুবহু নকলের অভিযোগ এনেছে তারা। 

সরলপুর জানায়, কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করে বিনা অনুমতিতে তাদের ৪২ লাইনের গানটির ৩২ লাইন হুবহু গাইবার অভিযোগ করে। সোমবার প্রমাণসহ এ অভিযোগ দায়ের করেছে তারা। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ চার বছরের জেল ও দু লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আছে।

যদিও, সরলপুর ব্যান্ড বরাবরই বলে আসছে গানটি রাধা-কৃষ্ণের চিরায়ত প্রেম কাহিনী অবলম্বনে তাদের সৃষ্ট গানটি সম্পূর্ণ নতুনত্বের দাবি রাখে। যে কারণেই ইতিপূর্বে সুমী মির্জা নামের এক শিল্পীর একই ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে যথাযথ যাচাই বাছাই ও গবেষণার পর কপিরাইট অফিস তাদের সনদ বহাল রাখে।

এদিকে, নতুন করে সৃষ্ট বিতর্কের পর সম্প্রতি আইপিডিসি কর্তৃপক্ষ কপিরাইট অফিসে সরলপুর ব্যান্ডের গানটির মৌলিকত্ব নিয়ে পুনরায় প্রশ্ন তুলে তাদের সনদ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করে। 

সরলপুর ব্যাণ্ডের ভোকাল মার্জিয়া আমিন তুরিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে মোটেই চিন্তিত নই। আমরা তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সন্তোষজনক জবাব কপিরাইট অফিসে জমা দিয়েছি। আশা করছি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন বিবেচনায় গানটির কপিরাইটের বিষয়ে আমাদের যৌক্তিক দাবি কপিরাইট অফিস সুবিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্ত নিবেন। অন্যথায় যেকোন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।’

তুরিন প্রশ্ন রাখেন, ‘আমাদের এই ‘যুবতি রাধে’ গানটি লিখতে গিয়ে আমাদের অনুসরণ করতে হয়েছে বাংলার চিরায়ত সেই লীলা কীর্তন ধারার ভাব-ভংগিমা, রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলার বিভিন্ন শব্দ চয়ন, ভাবধারা ও তথ্য উপাত্ত, এটি কখনোই কোন গানের হুবহু নকল নয়।  অথচ, আমাদের গানটি হুবহু চুরি করে তারা আমাদেরকেই চোর প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন বই থেকে রাধা-কৃষ্ণের সেই চিরন্তন প্রেম কাহিনী নিয়ে বিভিন্ন লোকগীতি থেকে খণ্ড খণ্ড কয়েক লাইন এনে মিল দেখাচ্ছেন। বারবার আহ্বান জানানোর পরও দেখাতে পারেননি আমাদের আগে গানটি কোথায় তারা শুনেছেন? গবেষণ সাইমন জাকারিয়া ২০২০ সালে প্রকাশিত একটি কীর্তনের আসরে গাওয়া আমাদের গানটিরই একটি কাভার ভিডিও দেখিয়ে বলছেন, গানটি যুগযুগ ধরে গাওয়া হচ্ছে। তার ভুলটি ধরিয়ে দেয়ার পরও তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করে সংশোধন করেন নি। তার গবেষণা খণ্ডিত, পক্ষপাতদুষ্ট ও আইওয়াশ। আমাদের প্রশ্ন, গানটি গাইবার আগেই কি এ ধরণের গবেষণা তারা করতে পারতেন না? রাধা-কৃষ্ণ, শিরি-ফরহাদ, লাইলি-মজনুর প্রেম কাহিনী নিয়ে অসংখ্য সৃষ্টি আছে। তারাও কি নিজেদের মতো করে একটি গান তৈরি করতে পারতেন না? কেন হুবহু আমাদের গানটিই তারা চুরি করলেন।  এটি স্পষ্টতই কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। দেশের আইনের প্রতি, মেধাস্বত্তের প্রতি নুন্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে তারা এমনটি করতে পারেন না।”

প্রসঙ্গত, সরলপুর ব্যান্ড ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে সংগীত চর্চা করে আসছে।  শাওন-চঞ্চলের কণ্ঠে ‘সর্বত মঙ্গল রাধে’ শিরোনামে গানটি প্রকাশের পূর্বেই বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে সরলপুর ব্যান্ডের গাওয়া গানটির কয়েক মিলিয়ন ভিউ দেখা গেছে। বিভিন্ন কনসার্টে ও টেলিভিশন চ্যানেলে নিয়মিতই গানটি পরিবেশন করে আসছিলো গানের দলটি।