বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশের তারকা মহলে দেখা যায় কয়েক দলে বিভক্তি। যেমন তারকাদের একটি বড় অংশ ছাত্রদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন, আবার একদল ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির বিরোধিতাও করেছেন। আবার কেউ আগে-পিছে কোথাও ছিল না, থেকেছেন পুরোপুরি নিশ্চুপ। অবশেষে যখন সরকার পতন হল, তখন আলোচনার বাইরে থাকেনি তারকারাও। 

যারা ছাত্রদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছিলেন, আন্দোলনে হত্যা-গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তারা দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক অবস্থায় আছেন। যারা বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের অনেকেই লাপাত্তা। এবং যারা নিশ্চুপ ছিলেন, তাদের কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে মুখ খুলতেই নেটিজেনদের তোপের মুখে পড়ছেন।

কিন্তু তারকা মহলে এত এত বিভক্তির কারণ ছিল রাজনৈতিক চাটুকারিতা, এটাই দাবি করে সাধারণ মানুষ এমনকি তাদের অনুরাগীরাও। এমনকি তারকাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের দিকটায় দেশের জনসাধারণের ঘোর আপত্তি উপলব্ধি করা যায়। জনসাধারণের সর্বদা প্রত্যাশা, প্রত্যেক তারকারা সবসময় যেন ন্যায়ের পথে চলতে পারে। আবার অনুরাগীরাও মনে করেন, শিল্পী থাকবে শিল্পীর জায়গায়, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কেন।

দেশে সরকার পতনের আগে অনেক তারকারাই নিশ্চুপ ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর পলকেই পালটে যায় দেশের পটভূমি। ছাত্র আন্দোলনে চুপ থাকা তারকারা মুখ খুলতে থাকেন একে একে। তাদের একজন আলোচিত অভিনেতা ও সঞ্চালক শাহরিয়ার নাজিম জয়। সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় ছাত্র আন্দোলনে নিশ্চুপ থাকায়, কোনো সক্রিয় ভূমিকা না রাখায় জাতির কাছে নিঃশর্তে ক্ষমা চেয়েছেন। জয় মনে করেন, ক্ষমার চেয়ে বড় গুণ আর কিছু নেই। ক্ষমা প্রার্থী হয়ে একজন শিল্পীর জায়গা থেকে তার অবস্থানও পরিষ্কার করেন তিনি।

সেই ভিডিও বার্তায় জয়কে বলতে শোনা যায়, ‘এক সমন্বয়কে নিজেদের (শিল্পীদের) সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়, তিনি খুব সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, আপনাদের মাঝে অনেক শিল্পী রয়েছেন যারা অন্যায় করেছেন। আপনারা আন্দোলনের সময় ছাত্রদের এ আন্দোলনকে সরকারের হয়ে (আওয়ামীলীগ সরকার) অন্যভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। অনেক রকম পোস্ট করেছেন এ আন্দোলনকে, থামানোর, দমানোর । চেষ্টা করেছেন সরকারকে সহযোগিতা করার, সুবিধাভোগী হওয়ার। আপনারা বাংলাদেশ টেলিভিশনে যেয়ে কেঁদেছেন অনেকেই অথচ শত শত, হাজার হাজার স্টুডেন্ট রাস্তায় গুলি খেয়ে মারা গেছেন, কত মায়ের কোল খালি হয়েছে। অনেকেই তা বোঝেনি সরকারের চামচামি করেছে। সবসময় আপনারা মানুষের তোপের মুখে থাকবেন, ঘৃণার মুখে থাকবেন।’

ওই সমন্বয়কের বরাত দিয়ে জয় বলেন, ‘আপনারা শিল্পী, যাদেরকে মানুষ ভালোবাসে। আপনারা আপনাদের সংগঠন হোক, শিল্পী সমাজ হোক, সকলে একত্রিত হয়ে আপনারা জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন, ক্ষমা চান। ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আপনাদের আসলে আর কোনো পথ নেই।’

এরপর ওই ভিডিওতে বেগম খালেদা জিয়ার হত্যাচেষ্টার মামলার অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন জয়। ভিডিওবার্তায় জয় বলেন, ‘আমার নামে মামলা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার হত্যাচেষ্টার মামলা। যেখানে আমাকে আসামি করা হয়েছে। আমি মামলার এজাহার পড়েছি, যেখানে লেখা আছে- ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় অনেকের সঙ্গে আমিও ছিলাম। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িতে হামলা করেছি, তাকে হত্যার চেষ্টা করেছি।’

‘খুব দুঃখ পেয়েছি। জীবনে কখনো কাউকে গায়ে হাত দেওয়ার সাহস পাইনি। কারো সঙ্গে ঝগড়া বিবাদেও যাইনি। সেখানে এমন একটি ঘটনায় আমি মর্মাহত। খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমার পরিবারের মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছে।’- যোগ করেন অভিনেতা।

ডিএ