বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছেন সেখানকার নায়িকা ইধিকা পাল। বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা, ঘৃণা সবই উঠে এসেছে তার এই লেখায়। 

ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য লেখাটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো— 

সোমবার গণরোষ। এক রাতের মধ্যে বদলে গেল আমার চেনা বাংলাদেশ! এই বাংলাদেশে গিয়ে শাকিব খানের সঙ্গে ‘প্রিয়তমা’ ছবির শুটিং করেছি? ঈদের দিনে ছবিটা যখন মুক্তি পেল, প্রিমিয়ারে গিয়েছিলাম। দর্শকদের উন্মাদনা দেখে আনন্দে চোখে জল। বাংলাদেশের হৃদয় এত উষ্ণ! এত ভালবাসা জমে আছে পড়শি দেশের হৃদয়ে! কিন্তু সেই একই হৃদয়ে এত ঘৃণা জমেছিল, টের পাইনি তো! বাংলাদেশের আপ্যায়নের কথা আমার থেকে শুনুন। ইলিশ মাছের রকমারি পদ, ঢাকাই জামদানির কথা সকলের জানা। ওখানে একটি বাড়িতে নিমন্ত্রণ মানে কম করে ১৪ রকমের রান্না। ওজন বাড়িয়ে ফিরেছিলাম ও পার বাংলা থেকে। তখনও ঘুণাক্ষরে টের পাইনি, আমার চেনা সেই দেশে এত রক্ত ঝরবে। ঝরবে লাখো লোকের চোখের জল।  

এক এক সময় এ-ও মনে হচ্ছে, আমি না হয় অন্য দেশের। বাংলাদেশের মানুষেরাই কি টের পেয়েছিলেন, এ ভাবে ছাত্র আন্দোলনের ধারা বদলে যাবে?

আন্দোলন এক রকম। গণরোষ অন্য কথা। আরও ন্যক্কারজনক, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্তর্বাস প্রকাশ্যে পুরুষদের হাতে হাতে ফেরা। বাংলাদেশ, এটা তোমার থেকে আশা করিনি। যেমন, আশা করিনি, সমাজের অতি সাধারণ মানুষ কাঁদতে কাঁদতে সর্বস্ব লুটের কথা সমাজমাধ্যমে এসে জানাবেন। আমার প্রিয় পড়শি দেশ, তোমার জন্য, দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য মন থেকে প্রার্থনা করছি, আবার সব শান্ত হোক। হাসিতে ঝলমলিয়ে উঠুক সোনার বাংলা। প্রবাহিত হোক, ভালবাসার ফল্গুধারা। যার স্পর্শে হিংসা, ঘৃণার মতো সব কালো ধুয়ে যাবে। জানি, আমার প্রার্থনা সফল হবেই। 

বাংলাদেশ, তোমায় নিয়ে আমার কোনও নালিশ নেই। সমস্যা নেই, ভয়ও নেই। তুমি ডেকে নিয়ে গিয়ে আমার মাধ্যমে দুই দেশের বিনোদন, সংস্কৃতি, ভাবের আদানপ্রদান ঘটিয়েছ। তাই আবারও তোমার ডাকের অপেক্ষায়। ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে শাকিব খান-সহ আমার অন্যান্য সহ-অভিনেতার নিয়মিত খোঁজ নিতে পারছি না। কিন্তু জানি, বাংলাদেশ চেনা ছন্দে ফিরলেই আমি আবার সে দেশের ছবির নায়িকা হব, সেখানে কাজ করব। কারণ, আমার উপরে তো বাংলাদেশের কোনও রাগ নেই! 

এনএফ