মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানি ও ফার্মা সংস্থা এনকোর হেলথকেয়ারের কর্ণধার বীরেন মার্চেন্টের কন্যা রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ের অনুষ্ঠানে মহা ধুমধামে শেষ হয়েছে। প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলা এই বিয়ের কদিন আগেই শেষ হলো। মুম্বাইয়ের বিমানবন্দরে অন্তত একশোটির বেশি প্রাইভেট জেট নেমেছে অতিথিদের যাতায়াতের জন্য। হলিউড-বলিউড তারকা, রাজনৈতিক নেতা থেকে পুরো পৃথিবীর সংবাদমাধ্যমের নজর ছিল এই বিয়েতেই।

কিন্তু এই বিয়েই কি ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে চোখধাঁধানো বিয়ে? ছোট ছেলের বিয়ে দিতে মুকেশ আম্বানি ঠিক কত খরচ করছেন, এখনও জানা যায়নি। কেউ বলছেন আড়াই হাজার কোটি টাকা, কেউ বলছেন পাঁচ হাজার কোটি টাকা। ভারতের মত দেশে, যেখানে দারিদ্র্য এখনও এত বেশি, সেখানে এত জাঁকজমকপূর্ণভাবে বিয়ে দেওয়া, তার জন্য মুম্বাই শহরটার একাংশ কার্যত স্তব্ধ করে দেওয়া নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে অনেক। পৃথিবীতে ভারতীয় বিয়ের নামডাক আছে। কিন্তু এর আগে কি ভারতের শিল্পপতিদের এরকম বিয়ের নজির আছে? একনজরে দেখে নেওয়া যাক...

১) ইশা আম্বানি ও আনন্দ পেরুমল
বিয়েবাড়ির জাঁকজমকে মুকেশ আম্বানির তুলনা হতে পারেন তিনিই। ছোট ছেলে অনন্তের আগে মেয়ে ইশার বিয়েতেই ৭০০ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন বলে দাবি বিভিন্ন মিডিয়ার। ২০১৮ সালে আয়োজিত এই বিয়েতে যে লেহেঙ্গাটি পরেছিলেন ইশা, তার দাম ছিল নব্বই কোটি টাকা। সেটি বর্তমানে নীতা মুকেশ আম্বানি কালচারাল সেন্টারে রাখা আছে। প্রত্যেক আমন্ত্রিতকে তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। স্রেফ এই বিয়েতে পারফর্ম করবেন বলে রাতারাতি উড়িয়ে আনা হয়েছিল বিয়ন্সেকে। শোনা যায়, তিনি ৩৩ কোটি টাকা চার্জ করেছিলেন।

২) সুশান্ত রায় ও রিচা আহুজা, সীমান্ত রায় ও চন্তিনী নূর
এককালে ভারতের তাবড় শিল্পপতিদের মধ্যে একেবারে প্রথম সারিতে ছিলেন সাহারা গোষ্ঠীর কর্ণধার। ক্রিকেট থেকে ফুটবল, ভারতীয় ক্রীড়া জগতকে স্পন্স‌রে ভরিয়ে দিয়েছেন সুব্রত রায়। পূর্ববঙ্গ থেকে আসা, বিহারের বাঙালি পরিবারের সন্তান সুব্রত রায়ের ব্যবসার শুরুটা ছিল গোরক্ষপুরে। পরে লখনউতে নিজের ব্যবসার সদর দপ্ত‌র বানান তিনি। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজের দুই ছেলে সুশান্ত ও সীমান্ত রায়ের একইদিনে বিয়ে দিয়েছিলেন সুব্রতবাবু। লখনউয়ের সাহারা স্টেডিয়ামে প্রায় ১১ হাজার অতিথির সামনে ইতিহাস সেরা আয়োজন করা হয়েছিল। খরচ হয়েছিল প্রায় সাড়ে পাঁচশো কোটি টাকারও বেশি। তবে আরও একটা কারণে বিয়েটা স্মরণীয়। সুশান্ত-সীমান্তর সঙ্গেই একই মণ্ডপে আরও একশজন দরিদ্র্য ছেলেমেয়ের গণবিবাহ দিয়েছিলেন সুব্রত রায়। অতিথিদের মধ্যে ছিল দেড় হাজার গরীব মানুষ। 

৩) ব্রাহ্মণী রেড্ডি ও রাজীব রেড্ডি
ভারতের প্রাক্তন মন্ত্রী ও খনিশিল্পী ব্যবসায়ী গলি জনার্দন রেড্ডির মেয়ে ব্রাহ্মণী ও হায়দরাবাদের ব্যবসায়ী বিক্রম দেব রেড্ডির ছেলে রাজীব রেড্ডির বিয়ে হয়েছিল ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুর প্যালেসে। আমন্ত্রিত ছিলেন ৫০ হাজারেরও বেশি। পাঁচ দিন ধরে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে আয়োজিত এই বিয়েতে এলাহি আয়োজন করা হয়েছিল। এসেছিলেন বলিউডের নামজাদা তারকারা। 

৪) সৃষ্টি মিত্তল ও গুলরাজ বেহল
ইস্পাত শিল্পপতি ও ব্রিটেনের আর্সেলর-মিত্তল সংস্থার এগজিকিউটিভ চেয়ারম্যান লক্ষ্মীনারায়ণ মিত্তলের দাদা প্রমোদ মিত্তলের মেয়ে সৃষ্টির বিয়েতে কিছু বাদ রাখেননি মিত্তলরা। ২০১৩ সালে তিনদিন ধরে স্পেনের বার্সেলোনায় চলেছিল এই বিয়ে। প্রায় ৫০০ অতিথির জন্য এলাহি ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। খরচ হয়েছিল পাঁচশো কোটি টাকারও বেশি। বার্সেলোনার ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব কাতালান আর্টে বসেছিল আসর। ঘটনাচক্রে, ২০২০ সালে প্রমোদ নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন।

৫) বণিশা মিত্তল ও অমিত ভাটিয়া
লক্ষ্মী মিত্তল নিজের মেয়ের বিয়েতেও কিছু কম করেননি। আর্সেলর-মিত্তলের কর্ণধার নিজের মেয়ে বণিশার বিয়ে দিয়েছিলেন প্যারিসে। প্রায় সাতদিন ধরে ফরাসি রাজধানীতে চলেছিল উৎসব। রীতিমতো প্যালেস অব ভার্সাইতে আয়োজন করা হয়েছিল অনুষ্ঠান। এসেছিলেন শাহরুখ খান থেকে ঐশ্বরিয়া রাইসহ অনেকে। রীতিমতো প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে বর্ণাঢ্য আতশবাজির খেলা চলেছিল এই উপলক্ষ্যে। ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত এই বিয়ের মণ্ডপ সজ্জার জন্য মুম্বাই থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল শিল্পীদের। একটি নাটক লিখে দিয়েছিলেন জাভেদ আখতার। আম্বানিদের এই বিয়ের আগে অনেকে বিয়ে বলতে আজও লক্ষ্মী মিত্তলের মেয়ের বিয়েকেই মনে রাখেন।

পিএইচ