দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুনেত্রা। ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া দেলোয়ার ঝাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘পালকী’ ছবিতে অভিনয় করে ভক্ত-অনুরাগীদের মাঝে অন্যরকম জনপ্রিয়তা এনে দেয়।

দেড় মাস আগে গত ২৩ এপ্রিল কলকাতায় মারা যান সুনেত্রা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। বিষয়টি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন অভিনেতা জায়েদ খান।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা, শৈশবের আমার পছন্দের একজন নায়িকা, চোখের প্রেমে পরতো যে কেউ, তিনি সুনেত্রা। অনেকদিন বাংলাদেশ ছেড়ে কলকাতা। আমি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকা কালীন বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছিলাম। আজকে হঠাৎ শুনলাম তিনি আর নেই,মৃত্যুবরণ করেছেন। নীরবে নিভৃতে চলে গেলেন। এভাবেই হারিয়ে যায় মানুষ, চলে যায়। আপনি ভালো থাকবেন ওপারে। অনেক চলচ্চিত্র দেখবো আর আপনাকে মিস করবো।’

জায়েদ খানের সেই পোস্টে ভক্ত-অনুরাগীরা সমবেদনা জানিয়েছেন। এক ভক্ত লিখেছেন, ‘সত্যি উনার আগের অনেক মুভি দেখেছি, চোখ টা বিষণ সুন্দর ছিল মায়াবী চেহারা। অনেকদিন খুঁজতাম উনাকে তো কোন মুভিতে দেখিনা আর, ভাবতাম হয়ত নাই। আজকে জানলাম উনি এখন মারা গেছেন।’

আরেকজনের ভাষ্য, ‘আহারে খুব মন দিয়ে দেখতাম উনার পালকি ছবি। উনাকে তো দেখা যায়নি। অন্য নায়িকাদের তাও দেখা গেছে, খুব খারাপ লাগছে।’

জাফর ইকবালের বিপরীতে ‘ঘর ভাঙা ঘর’ ছবিটিকেই সুনেত্রা অভিনীত সর্বশেষ বাংলাদেশি ছবি বলে ধরা হয়। এটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯২ সালে। এরপর কিছুদিন কাজ করেন কলকাতার ছবিতে। ১৯৯৯ সালের সেখানে সর্বশেষ সুনেত্রা অভিনীত ‘দানব’ ছবিটি মুক্তি পায়। সেই ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন কলকাতার শক্তিমান অভিনেতা ভিক্টর ব্যানার্জির বিপরীতে।

কলকাতায় তিনি কাজ করেছেন ‘সিঁথির সিঁধুর’, ‘মনসা কন্যা’ ইত্যাদি ছবিগুলোতে। তিনি ‘তালাশ’, ‘শূন্যে কি তালাশ’ নামের দুটি উর্দু ছবিতেও অভিনয় করেছেন। পাকিস্তানের টিভি নাটকেও সুনেত্রা ছড়িয়েছেন অভিনয়ের দ্যুতি।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পেলেও সুনেত্রা ছিলেন কলকাতার মেয়ে। সেখানেই মঞ্চে অভিনয় করতেন। তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন গুণী নির্মাতা মমতাজ মালী। ১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘উসিলা’ ছবি দিয়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সে অভিষিক্ত হন তিনি।

১৯৭০ সালের ৭ জুলাই সুনেত্রা জন্মগ্রহণ করেন কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে। পারিবারিক নাম তার রিনা সুনেত্রা কুমার। দুই ভাইবোনের মধ্যে সুনেত্রা ছোট। তিনি মাধ্যমিক শেষ করেছিলেন কলকাতার গখলে মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলে। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি প্রাণিবিদ্যায় মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতি চর্চার প্রতি মনোযোগী ছিলেন তিনি। নাচ, গান ও অভিনয়ে নিজেকে তৈরি করেছিলেন।

এমআইকে/