সংসার ও অভিনয় দু’ক্ষেত্রেই একা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি : ঋতুপর্ণা
টলিউড অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সংসার এবং অভিনয় দুই ক্ষেত্রেই একা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, এতেই নাকি তার আনন্দ। একজন নারী শুধু ঘরের কাজই নয়, তাকে আরও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। নারী দিবসে সমাজ সংসারে নারীদের সেই অবদান ও নারী হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা জানালেন অভিনেত্রী।
অভিনেত্রী বলেন, কোনো রকম ভণিতা না করেই বলতে পারি মেয়েরা অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে সামলাতে পারে। ছেলেরা পারে না তা নয়। তবে মেয়েরা এ ক্ষেত্রে একটু এগিয়ে।
বিজ্ঞাপন
আমার দাদিকে দেখেছি, রান্নাঘর থেকে বাইরের জগৎ– একা হাতে সামলাতে। আমি তো ওর হাতেই মানুষ। বাড়িতে তখন আত্মীয়স্বজনের আনাগোনা, ঠাকুমা ঢালাও বিছানা করে এক হাঁড়িতে তাদের যেমন খাওয়াত, তেমনি স্নিকার্স পরে পিঠে ব্যাগ নিয়ে বেড়াতে যেত। স্নাতক স্তরের পড়াশোনাও ছিল না তার। কিন্তু আমার মনে হয় মেয়ে হিসেবে এমন সহজাত ক্ষমতা ছিল যে একসঙ্গে অনেক দায়িত্ব নিতে পারত। এই ক্ষমতা কিন্তু সময় বা পরিস্থিতির জন্য তৈরি হয় না। ভেতরেই থাকে। আমি কখন আঁকার স্কুলে যাব, কখন পড়ব সব নখদর্পণে। ভোর ৬টায় আমায় ডেকে দিয়ে বলত, “ওঠ! কখন পড়বি, ন’টা তো বেজে গেল।’
শুধু কি আমি? মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জায়গা তৈরি করার ক্ষেত্রেও দাদি সজাগ ছিলেন। আমার ফুফুরা সেই ভাবে মানুষ হয়েছিল। এক ফুফু ব্যাংকে কাজ করেছে, আর এক জন শান্তিনিকেতনে বাটিক শিখেছে। অন্য জন অংক নিয়ে পড়াশোনা করেছে।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেন, আমার মা বিয়ের পরে ওই একভাবেই হঠাৎ ২০ জন আত্মীয় চলে এলে, তাদের হাসিমুখে আপ্যায়ন করেছেন। তবে মেয়েদের নিজের সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরি। আমি যদি অসহায়, দুর্বল হিসেবে সকলের সামনে নিজেকে জাহির করি, লোকেও ওই চোখেই আমাকে দেখবে। তখন আমাকে ঘিরে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের পরিবেশ তৈরি হবে। আমার ভালো লাগা, ইচ্ছা সব আমাকেই দেখতে হবে। না হলে তো কিছুই করা যাবে না। কারও কিচ্ছু এসে-যায় না। সময়ে এক এক করে প্রিয়জন হারিয়ে যাবে। মানুষ আরও বিচ্ছিন্ন হবে। কিন্তু এ নিয়ে যদি সারাক্ষণ মনখারাপ করি তাহলে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনব।
এই তো সকাল থেকে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে আমার শাশুড়ি হাসপাতালে। তার সব দায়িত্ব আমার। মেয়ের খবর রাখা। ছেলেকে ফোন করা। সংসারের নানা কাজ... সবই চলছে ।
এখন সবাই জোরে দৌড়চ্ছে। আবেগের কোনো দাম নেই। আগে আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা নিয়ে ভাবতে একশো জন হাজির হয়ে যেত। এখন লোকে ফোনে পরামর্শ দিয়ে চলে যাবে। উল্টে বলবে ‘ওর মধ্যে সারাক্ষণ হতাশা’। এড়িয়ে যাবে। নিজেকে করুণার পাত্র যেন কোনো মেয়ে তৈরি না করে।
আমি এখন মর্যাদা নিয়ে খুব ভাবি। মানুষের কাছে সব কিছু থাকলেও সে মর্যাদাহীন হলে বিপদ। আমি মাটিতে পড়লে নিজেকেই নিজে উঠিয়ে নিয়ে চলি। সংসার আর কাজ দুটোতেই বিশ্বাস করি। ইন্ডাস্ট্রিতেও দীর্ঘ দিন ধরে একা যুদ্ধ করছি। বড় প্রযোজনা সংস্থারা যে আমার সঙ্গে আছে, এমনও নয়। আমি নিজেই নিজের জায়গা তৈরি করেছি। নতুনদের সুযোগ দিয়েছি। আমি আমার সবটা দিয়ে কাজ করি। কান্না মুছে হাসি ফিরিয়ে আনি। আমি বৃদ্ধি করতে না পারি, সৃষ্টি তো করি...না হলে থমকে যাব!
এমএ