বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে সরকারি অনুদানে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'মাইক' এর ফুটেজ দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক চুরি হওয়ায় অবিলম্বে তা উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আবেদন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পরিচালক ও প্রযোজক এফ এম শাহীন বলেন, আমি ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে কেন্দ্র করে পূর্ণদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'মাইক' নির্মাণ করি। চলচ্চিত্রটি আগামী ৭ মার্চের পূর্বেই মুক্তি দেওয়ার কথা। ছবিটি সহকর্মীদের নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টায় পরীক্ষামূলকভাবে দেখার সময় আমাদের অফিসের উত্তরাংশে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের তাকাফুল প্রকল্প অফিস হতে অপরিচিত ৬/৭ জন বের হয়ে বলেন, এটা ইসলামী ইনস্যুরেন্স টাওয়ার। এখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি, ভাস্কর্য ও চলচ্চিত্র কার্যক্রম ইত্যাদি করা যাবে না। এটা আমাদের চেয়ারম্যান ফখরুল সাহেবের হুকুম।

তিনি বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি পদ্মা লাইফ টাওয়ারের ইলেক্ট্রিশিয়ান বিকেল ৫টায় এসে বলেন, ভবনের বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করতে হবে বিধায় এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকবে। তারপর দুই ঘণ্টারও বেশি সময় অতিবাহিত হলে ইলেকট্রিশিয়ান মাহে আলমকে জিজ্ঞেস করলে জানান, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম স্যারের নির্দেশ ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস চেয়ারম্যান আসগর আলী স্যারের হুকুমে আপনাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ১০টায় আমি আমার ড্রাইভারের কল পেয়ে অফিসে ঢুকে দেখি বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে, তর্জনী ভাস্কর্যটিও মেঝেতে পড়া। গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার মধ্যে যেকোনো সময় পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স ভবনের ১১ তলায় বি-বার্তা ও জাগরণ টিভির অফিসে দুষ্কৃতিকারীরা আমার টেবিলের ড্রয়ারে রক্ষিত ‘মাইক' চলচ্চিত্রের সর্বশেষ এডিটেড ফুটেজের পোর্টেবল হার্ডডিস্ক চুরি করে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

শাহীন বলেন, এছাড়া বি-বার্তার সম্পাদকের ড্রয়ার থেকে বেতন ও ভাড়ার জন্য তোলা নগদ ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং একটি অ্যাপল ব্র্যান্ডের আইপ্যাড যার মূল্য ১ লাখ ১০ হাজার টাকাও নিয়ে যায়। যার সর্বমোট মূল্য এক কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, অত্র ভবনের ১১ তলার একাংশ অফিস হিসেবে ভাড়া নিয়ে ২০২১ সালের ৩ মে থেকে গণমাধ্যম কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি।

তিনি জানান, বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করলে রমনা থানা পুলিশ, ডিবি এবং সিআইডি ঘটনাস্থলে এসে উক্ত ঘটনা দেখেন ও শোনেন। এদিকে নাশকতা, ভাংচুর-চুরির ঘটনায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি গভীর রাত পর্যন্ত রমনা থানায় অপেক্ষা করেও মামলা করতে পারিনি। বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ আইপি টিভির অফিসে হামলা, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে উপজীব্য করে পূর্ণদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'মাইক' এর ফুটেজ চুরির বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে পরদিন থেকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), তেজগাঁও কলেজ সাংবাদিক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি, খুলনা বিভাগীয় সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকা, ইউনিভার্সিটি জার্নালিস্ট ফোরাম, ঢাকাস্থ ঝিনাইদহ সাংবাদিক ফোরাম, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা প্রেসক্লাব, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা আলিয়া সাংবাদিক সমিতি, দৌলতপুর রিপোর্টার্স ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দেয় এবং গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে চাপে পড়ে ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর আমাকে ডাকে রমনা থানা পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগপত্রে কাটছাঁট করার জন্য দীর্ঘ সময় বসিয়ে রেখে রাত প্রায় দেড়টার দিকে বলে, ডিসিকে না দেখিয়ে মামলা নেওয়া যাবে না। ১১ ফেব্রুয়ারি, শনিবার রমনা মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা চোর/চোরদের বিবাদী করে চুরির মামলা নেয়, যার নং: ০৯, তাং: ১১.০২.২০২৩। মামলায় বিবার্তা ও জাগরণ অফিসে হামলা, ভাঙচুর-চুরির ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন পদ্মার চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামসহ অভিযুক্তদের নাম বাদ দিতে হয়েছে।

'মাইক' চলচ্চিত্রের পরিচালক ও প্রযোজক বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠন গৌরব '৭১ এর সাধারণ সম্পাদক ও গণজাগরণ মঞ্চের একজন সংগঠক। অন্যদিকে ফখরুল ইসলাম যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতের সাবেক নেতা ও পৃষ্ঠপোষক। যেহেতু জাগরণ টিভি ও বিবার্তা২৪.নেট সত্য, ন্যায় ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান, সেহেতু পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস চেয়ারম্যান আসগর আলী আমাকে এই টাওয়ার থেকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করে 'মাইক' এর সর্বশেষ এডিটেড ফুটেজের পোর্টেবল ড্রাইভটি চুরিতে তারা মদদ জুগিয়েছে।

তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাৎক্ষণিক সাড়া পেয়ে আমি আশায় বুক বেঁধেছিলাম, একটা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীরা চিহ্নিত হয়ে আইনের আওতায় আসবে এবং 'মাইক' চলচ্চিত্রের ফুটেজটি উদ্ধার হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও অপরাধীদের ধরার দৃশ্যমান কিছু পরিলক্ষিত হয়নি। তাই এই বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি ভরসা রাখা দায় হয়ে উঠেছে। এদিকে পদ্মা লাইফ কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগটি বন্ধ রেখেছে।

প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি জানিয়ে এফ এম শাহীন বলেন, আমাদের আশা, আকাঙ্ক্ষা ও আশ্রয়ের শেষ ভরসা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নিকট আকুল আবেদন- আপনি এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে 'মাইক' চলচ্চিত্রের ফুটেজ উদ্ধারের নির্দেশ প্রদান করুন।

ওএফএ/এসকেডি