‘আজাদ’ সিনেমা হল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনসন রোড ধরে হেঁটে গেলে জজকোর্টের বিপরীতে দেখা মিলবে বিংশ শতাব্দীতে নির্মিত ‘আজাদ’ সিনেমা হলের। যার দেয়ালগুলো এখনও সাদাকালো সিনেমা যুগের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু মানসম্পন্ন সিনেমার অভাবে রুচিশীল দর্শক সংখ্যা কমছে প্রতিনিয়ত। 

জানা যায়, ১৯২৫ সালে যাত্রা শুরু করে ‘আজাদ’ সিনেমা হল। শুরুতে এর নাম ছিল ‘মুকুল হল’। প্রতিষ্ঠার সময় যার মালিক ছিলেন নর্থব্রুক হল রোডের জমিদার বাড়ির মালিক মুকুল বাবু। পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে ‘মুকুল হল’ থেকে ‘আজাদ’ সিনেমা হলে রূপান্তরিত হয়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, হল পরিচালনায় ৭ থেকে ১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। বর্তমানে এর মালিক ঢাকা পিকচার্স প্যালেস। তারা পারিবারিক সূত্রে এর মালিকানা পেয়েছে। 

‘আজাদ’ সিনেমা হল

সময়ের পরিক্রমায় উন্নত হয়েছে সিনেমা হল। শহরের দর্শক এখন মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখে অভ্যস্ত। যে কারণে পুরোনো হলগুলোর দর্শক কমছে। এক সময়ে অনেক জনপ্রিয় হল হারিয়েছে তাদের জৌলুশ। বাংলা সিনেমার সংখ্যা কমার সঙ্গে হল বন্ধও হয়েছে অনেক। সেই পথেই এগোচ্ছে ‘আজাদ’। 

বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি ঢুকে যায় ‘আজাদ’-এর ভেতরে। হলের দেয়ালগুলোর জীর্ণ দশা। দেখলে মনে হবে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যত্নের অভাবে শহর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আরও একটি ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল।

‘আজাদ’ সিনেমা হলের স্পেশাল টিকিটের মূল্য ২৪ টাকা। ভেতরে এখনও সেই পুরোনো কাঠের চেয়ার। মানসম্মত সিনেমার অভাবে দর্শকদের ভিড় এখন আর দেখা যায় না। প্রতি শোতে দর্শক সংখ্যা মাত্র ৭ থেকে ১০ জন।

‘আজাদ’ সিনেমা হলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ম্যানেজার পরিতোষ রায় বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রেক্ষাগৃহের অবস্থা ভালো নয়।  এখন মানসম্মত কোনো সিনেমা নেই। মালিক হলের কার্যক্রম দেখতে সচরাচর আসেন না। হল চালাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই মালিক এখন এটি ভেঙে মার্কেট করতে চাচ্ছেন।’ 

‘আজাদ’ সিনেমা হল

সিনেমার অশ্লীল পোস্টার নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এগুলো আকর্ষ ণের জন্য করা হয়। সিনেমার মধ্যে অশ্লীল কোনো দৃশ্য নেই।’ 

সিনেমার হল প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিম বলেন, ‘সিনেমার করুণ পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। এফডিসি কেন্দ্রিক সিনেমা নির্মাণের মান কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ দর্শক আকর্ষ ণের ধারণা থেকে বের হয়ে যৌনতা, অতি নাটকীয়তা, অবাস্তব কাহিনি ইত্যাদি দিয়ে সিনেমাগুলো পরিপূর্ণ হচ্ছে।’

নব্বই দশকের পরবর্তী অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘নব্বই দশকের পর থেকে ঢাকাই সিনেমা জগতে শৈল্পিক মানুষদের সংখ্যা কমে গেছে। ২০০০ সালের পর আরও খারাপ অবস্থা। আমাদের সিনেমা উৎপাদনের মূলকেন্দ্র এফডিসি। আশির দশকের পর থেকে এফডিসির সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে নান্দনিক, মেধাবী, শৈল্পিক মানুষের। বর্তমানে এখন তা প্রায় মেধাশূন্য হয়ে আছে।’

তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত জুনায়েদ আহমদ হালিম বলেন, ‘স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়েও আমাদের দেশীয় সিনেমার সুনাম ছিল। নতুন প্রজন্ম প্রযুক্তিবোধ সম্পন্ন, তারা সিনেমার দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশে সিনেমা নিয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা হচ্ছে। প্রজন্মের পরিবর্তন হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে একদিন পরিবর্তন আসবে।’

এমআরএম/এমএমজে