কিংবদন্তি গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার (৭৯) মারা গেছেন। রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ৫৫ ‍মিনিটে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান বলে নিশ্চিত করেন গীতিকবির ভাগিনা অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের দুই সন্তান-উপল ও দিঠি। বাবার মৃত্যুর সময় ছেলে উপল পাশে থাকলেও মেয়ে দিঠি আছেন দেশের বাইরে, যুক্তরাষ্ট্রে। আর তার জন্যই অপেক্ষায় আছে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের পুরো পরিবার।

এই কিংবদন্তি গীতিকারের ভাগনে অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় সকালে ঢাকা পোস্টকে জানান, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। বাড়িধারা পার্ক রোডের বাসায় শুরুতে তাকে নেওয়ার কথা থাকলে তা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।

জয় বলেন, ‘আমার মামাতো বোন দিঠি দেশের বাইরে। আমরা সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছি। ও আমেরিকা থেকে আজ (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল দশটার দিকে দুবাই নামার কথা। সেখানে তার অবস্থান করার কথা রয়েছে। এখন দুবাই নেমে সঙ্গে সঙ্গে দেশের টিকিট পাওয়া এবং আসাটা জটিল হতে পারে। আমরা আশা করছি, সন্ধ্যা বা রাতের মধ্যে দিঠি ঢাকায় নামতে পারবে। সে আসার পরই বাকি সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হবে।’

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেন। প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান লেখেন ১৯৬৭ সালে আয়না ও অবশিষ্ট চলচ্চিত্রের জন্য।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের গানে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, প্রেম, বিরহ, স্নেহ’সহ আরও নানা প্রসঙ্গ। ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’-সহ অসংখ্য কালজয়ী গানের এই রচয়িতা এই গীতিকবি। বিবিসি বাংলার জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় তার লেখা গানই রয়েছে তিনটি।

তার লেখা আরও কালজয়ী কিছু গান হলো—‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’ প্রভৃতি।

১৯৬৭ সালে চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হওয়ার পর থেকে কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান লেখাতেও দক্ষতা দেখান তিনি। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নান্টু ঘটক’ ১৯৮২ সালে মুক্তি পায়। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৪১টি।

নিজ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দেশ চিত্রকথা থেকে ‘শাস্তি’, ‘স্বাধীন’, ‘শর্ত’, ‘সমর’, ‘শ্রদ্ধা’, ‘ক্ষুধা’, ‘স্নেহ’, ‘তপস্যা’, ‘উল্কা’, ‘আম্মা’, ‘পরাধীন’, ‘আর্তনাদ’, ‘পাষাণের প্রেম’, ‘এই যে দুনিয়া’ নামের চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন।

২০০২ সালে একুশে পদক এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন তিনি। এছাড়াও পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একাধিকবার বাচসাস পুরস্কার, বিজেএমই অ্যাওয়ার্ড, ডেইলি স্টার কর্তৃক লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ডসহ তার অর্জিত পুরস্কারের সংখ্যা একশর বেশি।

আরআইজে