‘ডানা ভাঙা পাখি’র মতো টুটুল আমার কাছে এসেছে: সোনিয়া
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী উপস্থাপিকা শারমিনা সিরাজ সোনিয়াকে বিয়ে করেছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এস আই টুটুল। গত ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসে সেখানে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তারা। দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদের সঙ্গে ২৩ বছরের সংসার চুকিয়ে টুটুলের এই বিয়ে নিয়ে হচ্ছে নানান আলোচনা।
এরমধ্যেই টুটুলের সঙ্গে প্রেম ও বিয়ের বিস্তারিত শোনালেন এস আই টুটুলের দ্বিতীয় স্ত্রী সোনিয়া। তিনি বলেন, ‘ডানা ভাঙা পাখির মতো টুটুল আমার কাছে এসেছে।’ মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সকালে হোয়াটস অ্যাপে ঢাকা পোস্টের কাছে পুরো জার্নির গল্প বলেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
শারমিনা সিরাজ সোনিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হিসেবে এস আই টুটুলকে আগে থেকেই চিনতাম। আমেরিকায় কয়েকটি অনুষ্ঠানে আমাদের দেখা হয়েছিল। তবে সে অর্থে পরিচয় ছিল না। দেখা হলে জাস্ট তাকে সালাম দিতাম, এতটুকুই। এমন কী তিনি আমার ফেসবুকেও ছিলেন না। গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে আরটিভির রিয়ালেটি শো ‘বাংলার গায়েন’-এর আয়োজন করা হয়। যেখানে বিচারক হিসেবে ছিলেন আই আই টুটুল, ইমন সাহা ও শওকত আলী ইমন। সেই আয়োজনের উপস্থাপনা করি আমি। আর সেই মঞ্চেই দুজনের ভালোভাবে পরিচয়। সেখানে কয়েকটা দিন টানা আমারা শুটিং করি, সবাই মিলে অনেক দুষ্টুমি করি, মজা করি।’
তিনি জানান, “গত বছরের শেষের দিকে তার (টুটুলের) ডিভোর্স হয়ে যায়। ফলে এই সময়টায় তিনি খুব একাকীত্বের মধ্যে ছিলেন। ভেতরে ভেতরে কষ্টে পুড়ছিলেন। এরমধ্যেই একদিন আমাকে বললেন, ‘আমি যে কটা দিন পৃথিবীতে বাঁচব, আমার হাতটা ধরে তুমি কী সাথে থাকবা?’ কথাটা আমি শুরুতে সিরিয়াসলি নেইনি। ভেবেছিলাম মজা করেছেন। তারপর ফোনে কথা বলা শুরু হলো। তার একাকীত্বের জীবনটা আমাকে নাড়া দিলো। সবচেয়ে ভালো লাগলো মানুষ হিসেবে তার চিন্তা-ভাবনাগুলো। অনেক দিন ধরে মেডিটেশনে থাকায় তার ধ্যান-ধারনায়ও নানা পরিবর্তন এসেছে। তার প্রতিটি জিনিসই আমার ভালো লাগলো। তার জন্য কষ্ট হলো, মায়া জন্মালো।’
টুটুলের স্ত্রী সোনিয়ার ভাষ্যে, ‘আমেরিকায় আমার যে ব্যস্ত জীবন আমার পক্ষে প্রেম-ডেট এগুলো করা সম্ভব নয়। আমি একটি ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডের শুভেচ্ছাদূত, তার ওপর সিঙ্গেল মাদার, আরও নানা কাজের ব্যস্ততা। সব মিলিয়ে ওসব করার সময় নেই। সেটা তাকে জানিয়ে দিয়ে বললাম, আপনি যদি সংসার করতে চান তাহলে আমরা সেটা নিয়ে আলাপ করতে পারি, দুজন দুজনকে বুঝতে পারি। এরপর আমরা দেখা করি, একে অন্যকে আরও গভীরভাবে জানি। আমেরিকায় তার এবং আমার দুজনেরই বোনেরা থাকে, তাদের সঙ্গে কথা বলি, পরিবারকে জানাই। তারপর সব জেনে বুঝে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই। গত ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশি রীতিতে আমরা নিকাহ করেছি। ইচ্ছা ছিল কয়েক মাস পর বড় আয়োজন করে সবাইকে জানিয়ে সুখবরটা দেবো। কিন্তু তার আগেই তো সবাই জেনে গেল।’
শারমিন সিরাজ সোনিয়া বলেন, ‘ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর টুটুল চাইলে নিজের মতো করে সিঙ্গেল লাইফ এনজয় করতে পারতেন। স্বাধীনভাবে যা খুশি করে বেড়াতে পারতেন। কিন্তু তিনি খুব ভালো মানুষ বলেই ওসবে না গিয়ে ধর্মীয় রীতি অনুসারে বিয়েটা করেছেন। কথা বলে, বিয়ে করে যা বুঝলাম সঙ্গী হিসেবে টুটুল অসাধারণ। এত ভালো একটা মানুষ, তিনি যে মেয়ের সঙ্গে থাকবেন সে অনেক ভাগ্যবতী। আমি এত ভালো একজন সোলমেট পেয়েছি, এটা হয়তো আমার এক যুগ ধরে সিঙ্গেল লাইফ পার করার পুরস্কার।
সবশেষে এস আই টুটুলের এই জীবনসঙ্গী বলেন, ‘অনেক কষ্ট পেয়ে, ডানা ভাঙা পাখির মতো টুটুল আমার কাছে এসেছে। এই সময়টায় তার এই সাপোর্টটা দরকার ছিলো। সবচেয়ে বড় কথা ঘর ভাঙা দুটি মানুষ যদি এক হয়, সংসার গড়ে, তাহলে তো সবার খুশি হওয়া উচিত। না তা করে, না বুঝে কেউ কেউ যখন সমালোচনা করেন তখন খুব খারাপ লাগে। সবার কাছে দোয়া চাই যেন আমরা জীবনের বাকি সময়টা একসঙ্গে সুখে-শান্তিতে কাটাতে পারি।’
উল্লেখ্য, এস আই টুটুল টুটুল ও তানিয়া আহমেদ বিয়ে করেছিলেন ১৯৯৯ সালে। এরপর থেকে সুখেই সংসার করে আসছিলেন। তাদের ঘর আলো করে পৃথিবীতে আসে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তিন সন্তানকে নিয়ে তানিয়া-টুটুলের সুখের অন্ত ছিল না। কিন্তু তাদের সেই সুখের সংসার ভেঙে যায়।
আরআইজে