খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। দীর্ঘ এক যুগ সংসার করার পর সন্তান গ্রহণ করেছেন তারা। গত জানুয়ারি মাসে তাদের কোলজুড়ে আসে কন্যাসন্তান। তার নাম রেখেছেন ইলহাম নুসরাত ফারুকী।

বাবা-মা হওয়ার পর থেকে ফারুকী ও তিশার মধ্যে এসেছে অনেক পরিবর্তন। জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছেন তারা। বিশেষত মা হওয়ার জন্য তিশার ত্যাগগুলো অনেক বেশি ভাবিয়েছে ফারুকীকে। সে উপলব্ধি অকপটে প্রকাশ করলেন নির্মাতা।

গত রোববার (৮ মে) ছিল বিশ্ব মা দিবস। এদিন তার স্ত্রী অর্থাৎ ইলহামের মাকে শুভেচ্ছা জানাতে পারেননি ফারুকী। কারণ তিনি যেই শুভেচ্ছাবার্তা লিখছিলেন, সেটা শেষ করতে করতে দুদিন সময় লেগে গেছে! অবশেষে গতকাল তিশা ও কন্যার একটি ছবি শেয়ার করে জানিয়েছেন মা দিবসের শুভেচ্ছা।

ফারুকী জানান, মা হওয়ার জন্য তিশা বলিউডের সিনেমার কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। হিন্দি সিনেমার গুণী নির্মাতা বিশাল ভরদ্বাজের ‘খুফিয়া’ সিনেমার জন্য তিশার কাছে প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেন অভিনেত্রী। ফারুকী বলেন, ‘তিশা স্কুল জীবন থেকে কাজ করছে। আগাগোড়া কাজ অন্তপ্রাণ একজন মানুষ কিভাবে এই বিষয়টাকে ডিল করে সেটা নিয়ে আমি ভাবতেছিলাম। কিন্তু তিশার যে কোনো সিদ্ধান্ত যেহেতু ও স্বাধীনভাবেই নেয়, আমি ওর সাথে এটা নিয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু বলছিলাম না। আমি দেখলাম ও বেশ শান্তভাবে দ্বিতীয় দিন কাস্টিং ডিরেক্টরকে বুঝিয়ে বলে যে, সে কাজটা করতে পারছে না। কারণ এই মুহূর্তে ও কোথাও মুভ করতে চাচ্ছে না। এই মুহুর্তে সে একটু নিরিবিলি থাকতে চায়, কারণ সে কনসিভ করেছে। কোনো রকম দোটান ছাড়াই ও ছেড়ে দেয় ওই সুযোগটা।’

মা হওয়ার আগে তিশা, সঙ্গে ফারুকী

ওটা ছিল তিশার ত্যাগের সূচনা। এরপর আরও অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়েছে মা হওয়ার জন্য। সেসবের বর্ণনা দিয়ে ফারুকী লেখেন, ‘ওই যে শুরু, তারপর দেখে আসছি একের পর এক তিশাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে ঘুম, পছন্দের খাওয়া, নিজের জন্য রাখা সময়। আমি মোটামুটি চেষ্টা করি সব সময়ই তিশার পাশে থাকতে, এক সাথে ইলহামকে বড় করতে। তবুও সবসময় আমি ভুমিকা রাখার সুযোগ পাই না। কারণ তিশা কিছু কাজের ব্যাপারে এতোই স্পর্শকাতর যে আমার হাতেও ছাড়তে রাজি না। ডায়পার পরানো, বা অন্যান্য কাজ আমার হাতে মাঝে মধ্যে ছাড়লেও গোসল করানোটা আমার হাতে ছাড়তে চায় না। তবুও আমি লেগেই থাকি। চেষ্টা করি যতখানি সম্ভব দায়িত্ব ভাগ করে নিতে।’

কিন্তু বাবা হিসেবে কোনো পুরুষই মায়ের সমান মানসিক চাপ নিতে পারবে না বলে মনে করেন ফারুকী। তার ভাষ্য, ‘একজন মাকে সন্তানের জন্য যা যা করতে হয়, যা যা জীবন থেকে ছাড়তে হয়, বাবারা চব্বিশ ঘন্টা সময় দিলেও মায়ের যে স্ট্রেস, যে কন্ট্রিবিউশন তার ধারে কাছেও যাইতে পারবে না।’

এসব কথা ফারুকী আগে থেকেই জানতেন। তবে বাবা হওয়ার পর গভীরভাবে উপলব্ধি করছেন। তিনি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘আমি কখনো এই সব নানাবিধ দিবস টিবস পালন করি না। কিন্তু এবারের মা দিবসের উসিলাটা কাজে লাগাইয়া আমি তিশাকে এই কথাগুলা বলতে চাইছি। ‘ডুব’ ছবিতে একটা সিন আছে না, সাবেরি মাকে সামনাসামনি ধন্যবাদ দিতে পারে না তাই একটু আড়ালে গিয়ে ফোন দিয়ে বলে? আমার অবস্থাও সেইরকম। মধ্যবিত্ত আড়ষ্টতায় সামনাসামনি ধন্যবাদ দিতে না পারার কারণে ফেসবুকে লিখে দিচ্ছি। লিখতে গিয়ে হচ্ছে আরেক বিপদ। একটু পরপর তিশা এসে বসে পাশে, কখনো ইলহাম খেলা করতে চায়। ফলে গতকাল শুরু করা লেখাটা আজকে এসে শেষ হইলো। বিলম্বিত মা দিবসের শুভেচ্ছার এই হেতু।’’

কেআই