বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেছেন, গবেষণা ও উদ্ভাবন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত অস্তিত্ব আমরা ভাবতে পারি না। তাই গবেষণা ও উদ্ভাবনে ইউজিসি সবসময় সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উৎসাহিত করে।

শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে সাসটেইনেবল টেকনোলজিস ফর ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

আলমগীর হোসেন বলেন, জীবনযাপন সহজ করতে আমাদের গবেষণা ও উদ্ভাবন প্রয়োজন। আমরা যাই করি না কেন, আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের জীবনযাপন সহজ করা। আমাদের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে পারে, কিন্তু আমরা যদি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে না পারি, তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।
 
ইউজিসির এ সদস্য বলেন, প্রযুক্তির বিকাশে মানবজীবনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে, সমাজ পরিবর্তিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে পরিবর্তন এমন আকারে ঘটবে, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। সেজন্য পরিবর্তনের সঙ্গে মিলিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। নয়তো আমরা সঠিক পথে চলতে পারব না, সাইডলাইনার হয়ে যাব।

আইইইই ফেলো ও যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক সজল কে দাস বলেন, কাজী নজরুল, রবীন্দ্রনাথ একদিকে যেমন কবি ছিলেন, অন্যদিকে তারা ছিলেন বিজ্ঞানী। তাই মাতৃভাষা বাংলার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান পড়তে হবে। কীভাবে প্রযুক্তির সাহায্যে সমাজকে টেকসই করা যায়, কীভাবে আমাদের জীবনকে আরও সহজ ও নিরাপদ করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে এবং কাজ করতে হবে। 

গ্রিন ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানি ফকিরের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের জেনারেল চেয়ার ও গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং সম্মেলনের অরগানাইজিং চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল আজাদ। 

বক্তারা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পেতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিকল্প নেই। আর এ চ্যালেঞ্জ অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয় ও এর শিক্ষক-গবেষকদের যেমন এগিয়ে আসতে হবে, তেমনি ইন্ডাস্ট্রি- ব্যক্তিদেরও কাজ করতে হবে সমানতালে। 

একুশ শতাব্দীর এ চ্যালেঞ্জে অবদান রাখার লক্ষ্য নিয়ে গ্রিন ইউনিভার্সিটির সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হয়েছে পূর্বাচল আমেরিকান সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে। সম্মেলন হচ্ছে অনলাইন এবং অফলাইনে। সম্মেলনে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন, জাপান, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, সুইডেন, মালয়েশিয়া, ভারত ও সৌদি আরবসহ বিশ্বের ৩১টি দেশের শতাধিক গবেষক ও অধ্যাপকরা অংশ নিচ্ছেন।

আয়োজকরা জানান, আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনে মূলত তিনটি পৃথক ট্র্যাক তথা ইন্টেলিজেন্ট কম্পিউটিং, নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেমস, ইলেকট্রনিক্স, পাওয়ার অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেমস এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাধান্য পাবে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জমা পড়া ১৬৭টি গবেষণা প্রবন্ধ থেকে বাছাইকৃত ৫৫টি প্রবন্ধ মৌখিক এবং ১০টি পোস্টার প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হবে। সম্মেলন পরবর্তী সময়ে গবেষণা প্রবন্ধগুলো আইইইই এক্সপ্লোর ডিজিটাল লাইব্রেরিতে স্থান পাবে।

সম্মেলনের অন্য বক্তারা হলেন- আইইইই ফেলো ও ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েসের অধ্যাপক তারেক আবদেল জাহের, আইইইই ফেলো ও সিঙ্গাপুরের রোলস রয়ছে ইলেক্ট্রিক্যালের প্রধান অমিত কে গুপ্ত, আইইইই ফেলো ও ইতালির ইউনিভার্সিটি অব ক্যালাবরিয়ার অধ্যাপক জিয়োনকার্লো ফোরটিনো,  ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আই চুন পাং, যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশলের অধ্যাপক মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, আইইইই ফেলো ও ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের তপন সাহা, কানাডার ইউনিভার্সিটি অব সাচকাচুয়ানের অধ্যাপক ড. চঞ্চল রায়; উহান টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ঝি চেন এবং জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ড্রেসডেনের ড. ইঞ্জিনিয়ার মনিরুদ্দোজা আশির।

সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ ৭০টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আটটি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে তিন শতাধিক শিক্ষক, গবেষক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও পলিসি প্ল্যানাররা অংশগ্রহণ করছেন।  এতে অংশগ্রহণকারী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা টেকসই প্রযুক্তিতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অবদান সম্পর্কে পূর্ণ স্বচ্ছ একটি ধারণা পাবেন। দেশকে এ বিপ্লবের সুবিধা নিতে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনায় তারা অংশ নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা আয়োজক প্রতিষ্ঠান গ্রিন ইউনিভার্সিটি সংশ্লিষ্টদের।

এএজে/আরএইচ