প্রতীকী ছবি

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার পর ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা বসানো হবে। একইসঙ্গে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে রাখা হবে বিশেষ নজর। ক্যাম্পাসগুলোতে ‘নৈরাজ্য’ ও ‘জঙ্গিবাদ প্রচার’ হওয়ার আশঙ্কা সংক্রান্ত কোনো তথ্য আছে কি-না জানতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় খুললে নানান সমস্যা আসতে পারে। সেগুলো মোকাবিলায় উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার পর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনবে। তাছাড়া ক্যাম্পাসের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের নজরদারি থাকবে। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্ন হয় এমন কিছুই হবে না।

করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে ২৭ সেপ্টেম্বরের পর একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে। পুনরায় চালু হওয়ার পর যেন কোনো ধরনের ‘অরাজক পরিস্থিতি’ তৈরি না হয়, সেজন্য এ নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয় ওই চিঠিতে।

একই সঙ্গে, মন্ত্রণালয় থেকে ইউজিসিকে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ধরনের ‘জঙ্গিবাদ প্রচার’ হচ্ছে কি-না, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থতি পর্যবেক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথসহ ক্যাম্পাসের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনবে।

একইসঙ্গে, যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ইউজিসি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মঞ্জুরি কমিশনের ‍দুই সদস্য বিষয়টি জানান।

জানতে চাইলে বৈঠকের সভাপতি ও মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কী করণীয় তা ঠিক করতে একটি গোপন বৈঠক ছিল। তাই, আমি এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না।

এর আগে গত সপ্তাহে পাঠানো এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারির আওতায় আনার নির্দেশ দেয়। এগুলো পুনরায় চালু হওয়ার পর যেন কোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া, প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয় ওই চিঠিতে।

গত ২ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এক বৈঠক নেওয়া সিদ্ধান্তের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রণালয় গত ৯ সেপ্টেম্বর ইউজিসিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে এসব তথ্য সংগ্রহের জন্য এই চিঠি পাঠায়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মঞ্জুরি কমিশন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মধ্যে এক সভার পর গত মঙ্গলবার সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের সব শিক্ষার্থীর করোনার টিকার অনলাইন নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে তারা সরাসরি ক্লাস শুরু করতে পারবে। ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে, একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় চালু হতে পারে।

এর আগে গত ২৬ আগস্ট সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া নিশ্চিত করার পর, ১৫ অক্টোবর থেকে পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সশরীরে ক্লাস শুরু করতে পারবে।

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, ষড়যন্ত্রকারীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কেন্দ্র করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ কর্মীদের সতর্ক থাকার এবং তুচ্ছ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদে না জড়ানোর আহ্বান জানান।‌

ওই সভায় উপস্থিত কয়েকজন উপাচার্য জানান, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। তারপরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সভায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং প্রবেশপথসহ ক্যাম্পাসের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এছাড়া, যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর ব্যাপারে সমস্যায় পড়ে, তাহলে ইউজিসি থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।

জানতে চাইলে মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সভায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‍পুনরায় চালু হওয়ার পর সেগুলো পরিচালনার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। ক্যাম্পাসে সম্ভাব্য নৈরাজ্য ও জঙ্গিবাদ প্রচারের বিষয়ে আলোচনার জন্য সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কি-না, জানতে চাইলে অধ্যাপক সাজ্জাদ বলেন, নৈরাজ্য নিয়ে আমি কোনো উদ্বেগ দেখছি না। এ‌ ব্যাপারে কোনো উপাচার্য সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি।

এনএম/ওএফ