দুই মাসেও অনুদানের টাকা পাননি ১ লাখ ৩৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত এক লাখ ৬৭ হাজার ২২৫ জন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য ঈদুল ফিতরের উপহার হিসেবে গত ১১ মে ৭৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কথা ছিল প্রতি শিক্ষক পাঁচ হাজার টাকা এবং কর্মচারী আড়াই হাজার টাকা করে পাবেন।
এক সপ্তাহের মধ্যে অনুদানের টাকা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে পৌঁছে যাওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকা, পরিচয়পত্রে ভুল, ভুল ফোন নম্বর ইত্যাদি কারণে দুই মাসেও অনুদানের এ টাকা পাননি তাদের মধ্যে এক লাখ ৩৬ হাজার ৮৭৭ জন। অর্থাৎ এখনো ৮২ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারী অনুদানের এ টাকা পাননি।
বিজ্ঞাপন
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যে এক লাখ ৬৭ হাজার ২২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অনুদান পাওয়ার কথা, তার মধ্যে ২৮ জুন পর্যন্ত স্কুল-কলেজের ১০ হাজার ৫৭৯ জন শিক্ষক এবং দুই হাজার ৩১৫ জন কর্মচারী অনুদান পেয়েছেন। কারিগরিতে ৯১ জন শিক্ষক ও ৯৮ জন কর্মচারী অনুদানের টাকা পেয়েছেন।
মাদরাসা অধিদফতরের দাবি, ৩০ জুন পর্যন্ত ১৭ হাজার ২৩৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী অনুদানের টাকা পেয়েছেন। তবে এ সংখ্যা আরও কম হতে পারে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত এক লাখ ৬৭ হাজার ২২৫ জনের মধ্যে মাত্র ৩০ হাজার ৩৪৮ জন অনুদানের টাকা পেয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই এক লাখ ৩৬ হাজার ৮৭৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অনুদান পাওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। শিক্ষকরা জানান, অনুদানের এ টাকা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা, সমাধানযোগ্য নয়। শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয় গত বছরের মতো শিক্ষকদের অনুদানের টাকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে পারে।
এর জবাবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের। কারণ সুবিধাভোগীদের টাকা সরাসরি মোবাইলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত তারাই নিয়েছেন। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, থাকলেও নানা ভুল, আবার অনেকে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলতে আগ্রহী নন। ফলে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট না থাকা এ শিক্ষক-কর্মচারীরা পরিচিত অন্য কারও অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছেন। এসব নম্বরে টাকা পাঠাতে গিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় দেখে যে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ব্যবহৃত নামের সঙ্গে ওই শিক্ষক-কর্মচারীদের নামের মিল নেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরও নন-এমপিও শিক্ষকদের অনুদানের টাকা দিয়েছিল সরকার। এ অনুদানের টাকা নেওয়ার জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কথা বলা হয়। অ্যাকাউন্ট খোলার চার্জ, এককালীন জমা সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা রাখা এবং যাতায়াত খরচ বাবদ একেকজনের প্রায় দেড় হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। এবার হঠাৎ করে সরকার বলল, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ টাকা দেওয়া হবে। এতেই সমস্যাটি তৈরি হয়েছে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মাদরাসা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু নঈম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শুধু শিক্ষকদের ডাটা এন্ট্রি দিচ্ছি। এন্ট্রি দিতে গিয়ে অনেক শিক্ষকের জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে তাদের দেওয়া তথ্যের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। যাদের তথ্যে গরমিল রয়েছেন, তাদেরটা এন্ট্রি দেওয়া যাচ্ছে না। যাদেরটা এন্ট্রি দেওয়া যাচ্ছে না, তাদের সম্পর্কে মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিয়েছি। তারা টাকা পাবেন কি না সেটা শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়। আমাদের কাজ শুধু শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য এন্ট্রি দেওয়া।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) রুহুল মমিন বলেন, এখন পর্যন্ত কতজন শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য সঠিকভাবে এন্ট্রি দেওয়া হয়েছে, সেই তথ্য আমার কাছে নেই। তবে প্রচুর শিক্ষকদের তথ্য এন্ট্রি দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ তাদের তথ্য গরমিল রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের বিশেষ অনুদান পেতে একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ অনেক শিক্ষক-কর্মচারী নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট না থাকায় তারা অন্যের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছেন। আর এতে নাম নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় করছে না। এ টাকা আদৌ আমরা পাবো কি না জানি না। আশা করি, সরকারের শীর্ষ মহল ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, নন-এমপিও শিক্ষকদের সমস্যার কথা সরকারের অনুধাবন করা উচিত। কারণ, মফস্বল অঞ্চলের একজন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি বেতন-ভাতা পান না। ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট করার কোনো প্রয়োজন হয়নি তাদের। তারপরও গত বছর সরকারের অনুদান নেওয়ার জন্য দেড় হাজার টাকার বেশি খরচ করে তারা অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। তাই আমাদের দাবি, গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের চেকের মাধ্যমে অনুদানের অর্থ দিয়েছিল, এবারও যেন তা-ই করা হয়।
এনএম/আরএইচ