প্রশিক্ষণ নিয়েও ভাতা পাননি প্রাথমিকের ২১ হাজার শিক্ষক
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া ২১ হাজার শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েও পুরো ভাতা পাননি। করোনাকালে তিন মাস সরাসরি প্রশিক্ষণ দিয়ে পরে তাদের অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হয়। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ ভাতার পরিমাণ ৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা বকেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়াতে নিয়োগের পরপরই তাদের এক বছর মেয়াদি সিইনএড (সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন) অথবা দেড় বছর মেয়াদি বুনিয়াদি ডিপিএড (ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোয় (পিটিআই) এ প্রশিক্ষণ নেন তারা।
বিজ্ঞাপন
ডিপিএড প্রশিক্ষণ চলার সময় প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা করে ভাতা এবং কিট অ্যালাউন্স বাবদ এককালীন ১৮ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের ভাতা পাবেন বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ।
তিনি বলেন, এটি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জুনের পরও ডিপিএড ভাতা পাওয়ার সুযোগ আছে বলে জানিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় এখনো এটা বাতিল করেনি।
শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ডিপিএড প্রশিক্ষণার্থীদের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী মিটিংয়েও আলোচনা হবে। এইউইও, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টরসহ সব উচ্চতর পদে বিভাগীয় প্রার্থিতার সুযোগ এবং নিয়োগ যোগ্যতায় ডিপিএড/সিইনএড সার্টিফিকেট রাখার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে।
উল্লেখ্য, বছর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রশিক্ষণার্থীরা তিন মাস ক্লাস করার পরপরই মহামারি করোনার কারণে সরাসরি আর ক্লাস করতে পারেননি। তবে সরাসরি না পারলেও অনলাইনে তাদের নিয়মিত ক্লাস করতে হয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি সপ্তাহে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে তা পিটিআইয়ে গিয়ে জমা দিতে হয়েছে। অনলাইনে ক্লাস করা এবং নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে পিটিআইয়ে পৌঁছে দিতে হতো বলে পিটিআই কর্তৃপক্ষ তাদের প্রশিক্ষণ ভাতার পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল।
তবে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া হয়নি বরং নিয়মিত ভাতাই এখনও পাননি বলে অভিযোগ করেছেন প্রশিক্ষণার্থীরা। তারা বলছেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন এই ছয় মাসের ভাতা দেওয়া হলেও গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসের ভাতা তারা এখনও পাননি। যদিও করোনার মধ্যেই তারা সরাসরি পিটিআইয়ে গিয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। হঠাৎ চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কারণে অনেক প্রশিক্ষণার্থীকে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি টাকা দিয়ে সংশ্লিষ্ট পিটিআইয়ের আশপাশে বাসা ভাড়া করতে হয়েছে। কিন্তু পিটিআই কবে তাদের প্রাপ্য ভাতা দেবে, তা অনিশ্চিত।
প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা জানান, করোনাজনিত পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য তাদের প্রত্যেককে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার স্মার্টফোন, ওয়াই-ফাই কানেকশন, ওয়াই-ফাইয়ের মাসিক বিল, সংস্থাপন খরচ, অ্যাসাইনমেন্ট খরচ, বিজ্ঞান ব্যবহারিক খরচ, এক্সপ্রেসিভ আর্টের খরচ, বার্ষিক পরীক্ষার ফরম ফিলআপের টাকা ছাড়াও বার্ষিক পরীক্ষার সময় বাসা ভাড়া ও করোনার জন্য বাড়তি সুরক্ষা খরচ ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।
এনএম/এসকেডি