ঢাবির শতবর্ষে শিক্ষার্থীদের ভাবনা
সব নৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া জাতির আলোকবর্তিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (১ জুলাই)। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয় জড়িত। দেশের ইতিহাস, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি-প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনস্বীকার্য অবদান রেখেছে শীর্ষ এই বিদ্যাপীঠ। এখনো প্রতিবছর দেশের সর্বাধিক গ্র্যাজুয়েট এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তৈরি হয়।
অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আক্ষেপও কম নেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি। প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ আবাসিক সুবিধা পাননি শিক্ষার্থীরা, এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপরও শতবর্ষ উপলক্ষে কী ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরা?
বিজ্ঞাপন
শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. জাফর আলী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে শিক্ষার উচ্চমান বজায় রাখতে এর সিলেবাস প্রণীত হয়েছিল মূলত তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থার অনুসরণে। আর বিভিন্ন বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় কারণে এটি একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়া, আবাসন সংকট, ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ উল্লেখযোগ্য আরো কিছু কারণে অনেকেই আজ আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস পাচ্ছে। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পূর্তিতে দাবি রাখতে চাই যে, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামের যথার্থতা যেন ঠিক থাকে।
ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তাসনিম হাসান আবির বলেন, জাতির ক্রান্তিকালে যখন সবাই দিশেহারা হয়ে গেছে, তখন পথ দেখিয়েছে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শতবর্ষী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সব জায়গায় এগিয়ে ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। শতবর্ষে এসে আমাদের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। আমরা চাই সুস্থ রাজনীতির চর্চা যেনো ক্যাম্পাসে হয়, আবাসিক সমস্যার সমাধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে খাবারের মানোন্নয়ন, অত্যাধুনিক গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা, টিএসসির ঐতিহ্য বজায় রেখে এর আধুনিকায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের ট্রাফিক ব্যবস্থা অর্থাৎ বহিরাগত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে থাকা ভিক্ষুক, পথশিশু বা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের অন্যত্র পুনর্বাসন করার পাশাপাশি পড়ালেখার মান আরও বাড়াতে হবে এবং শিক্ষক নিয়োগে আরও স্বচ্ছতা আনতে হবে।
প্রত্যাশার কথা জানিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জামিন আহমদ বলেন, শতবর্ষী প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাস আর বৃক্ষ আমার সেই অনুভূতির সাক্ষী। কিন্তুু সেই মধুর অনুভূতি ম্লান হয় প্রিয় প্রতিষ্ঠানের কিছু সমস্যা দেখে। আবাসন সংকট, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত গবেষণার অভাবের বিষয়টি আমাদের ভীষণ পীড়া দেয়। তাই অন্তত শতবর্ষে এসে এ বিষয়গুলোতে কর্তৃপক্ষ নজর দেবে, সেই প্রত্যাশাই করছি।
সংকটগুলোর সমাধান সবচেয়ে বেশি জরুরি উল্লেখ করে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহান ইশরাক বলেন, উচ্চ শিক্ষালাভের প্রতিষ্ঠান হিসেবে একশ বছর পূর্ণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাঙালি জাতিসত্ত্বার স্বতন্ত্র বিকাশ ও পরিপূর্ণতা লাভের দিনগুলোতে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। তাই সময়ের পরিক্রমায় সামর্থ্যর অতিরিক্ত প্রত্যাশার ভারও তৈরি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে। শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা শুভানুধ্যায়ী নয়, এখনো দেশের সিংহভাগ মানুষ দারুণ কিছুর আশা করে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তবে, শতবর্ষের এই দীর্ঘ পথচলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান সংকটগুলোর সমাধান হওয়া সবেচেয়ে বেশি জরুরি। বিশেষ করে মানসম্মত গবেষণা বৃদ্ধি, আবাসিক সমস্যার সমাধান, লাইব্রেরি বর্ধিতকরণ, ক্যাম্পাসের যানজট নিরসন, ভর্তি ও অন্যান্য কাজে প্রশাসনিক জটিলতার অবসানসহ প্রভৃতি সমস্যার সমাধান হলে শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়টির অগ্রযাত্রা নতুন মাত্রা লাভ করবে।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাসমিদা মাহমুদ বলেন, শতবর্ষের ঢাবি বটবৃক্ষের ছায়ার তরে প্রত্যাশার পরিধি বিশাল। এই বিশালতার মধ্যে না হারিয়ে বেঁচে থাকতে চায় প্রতিটি শিক্ষার্থী, পরিপূর্ণতা আনতে চায় আশা-আকাঙ্ক্ষার আঙিনায়। শতবর্ষী ঢাবির শত ক্লান্তি দূর হয়ে যাক, শত প্রতিকূলতা হোক বিলীন, সমৃদ্ধি-অর্জনের পথে এগিয়ে যাক নিরন্তর। শুভ জন্মশতবার্ষিকী, প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর/জেডএস