শতভাগ উৎসব ভাতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতোই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা দুই ঈদ বোনাস বা উৎসব ভাতা চান শতভাগ।

সামনে ঈদুল আজহা উপলক্ষে এ দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বেসরকারি শিক্ষকরা। গত রোববার (২৭ জুন) তারা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর লিখিতভাবে এ দাবি করেছেন।

আজ মঙ্গলবার (২৯ জুন) ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র মো. নজরুল ইসলাম রনি। তিনি বলেন, সামনেই ঈদুল আজহা। এর মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বিদ্যমান বোনাস বৈষম্য নিরসন করতে হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ আর শিক্ষকরা পান ২৫ শতাংশ। এছাড়া সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যেসব মৌলিক বৈষম্য রয়েছে তা নিরসনের ব্যবস্থা নিতে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমরা আবেদন পাঠিয়েছি।

তিনি বলেন, শিক্ষায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেছে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনও চরম বৈষম্যমূলক, গতানুগতিক নানা ধারায় বিভাজিত। বর্তমানে সরকার হাজার হাজার রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছে। মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়েও কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি করেছে। কিন্তু একসঙ্গে জাতীয়করণ না করার কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক তথা পুরো দেশবাসী।

আবেদনে শিক্ষকদের দাবিতে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাস দীর্ঘ ১৭ বছরেও পরিবর্তন হয়নি। দীর্ঘ ২৮ বছরেও এমপিওভুক্ত হতে না পেরে চরম অর্থসংকটে দিনযাপন করছেন অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা। বেতন বৈষম্য থাকায় শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন হচ্ছে না। শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নসহ বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ ঘোষণা জরুরি।

২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী সকল সুযোগ-সুবিধা দাবি করেন শিক্ষকরা। তাদের দাবি, স্কেলভিত্তিক পূর্ণ বাড়ি ভাড়া, দেড় হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা, স্কেলভিত্তিক উৎসব বোনাস, স্কেলভিত্তিক বেতন নির্ধারণ, ধারাবাহিক পদোন্নতি ও বদলির ব্যবস্থা, প্রধান শিক্ষকদের ষষ্ঠ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, বিভাগীয় ভাতা ব্যবস্থা, পূর্ণ অবসর ভাতাসহ মাসিক পেনশন, শিক্ষার্থীদের স্বল্প খরচের সুযোগ এবং শিক্ষকদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ভাতা চালু করতে হবে।

এদিকে চলতি বছর ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’ জারি করেছে সরকার।

নীতিমালার ১১.৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন/বোনাসের নির্ধারিত অংশ/উৎসব ভাতার নির্ধারিত অংশ সরকারের ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল/সরকার নির্ধারিত সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে অথবা সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে করতে হবে। ’

জানা গেছে, সংশোধিত নতুন নীতিমালায় বোনাসের প্রসঙ্গটি আনা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া হয়নি শতভাগ বোনাস দেওয়ার ক্ষেত্রে। এখন শতভাগ বোনাস দিতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, এটি সরকারের উচ্চমহলের সিদ্ধান্ত। আমাদের কাছে শতভাগ বোনাস বাস্তবায়নের কোনো নির্দেশনা আসেনি। এলে অবশ্যই পদ্ধতিগতভাবে এটি কার্যকর হবে।

এনএম/এইচকে