ভিসি, প্রোভিসি, ট্রেজারার নেই ৭১ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে
দেশের ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭১টিই অভিভাবকহীন। এর মধ্যে সাতটিতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ তিন পদের একজনও নেই। বছরের পর বছর কাউকে নিয়োগ না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালাচ্ছে মালিকরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ তিনটি শূন্যপদ পূরণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও সংশ্লিষ্টরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ এ পদগুলোতে নিয়োগ দিচ্ছেন না। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্যরা নিজেদের মতো করে পরিচালনা করছেন এসব বিশ্ববিদ্যালয়। বছরের পর বছর মালিক-কাম ভিসির দায়িত্ব পালনের ঘটনাও দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তিনটি শূন্য পদের জন্য নাম পাঠানোর সময় বেঁধে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে যারা নাম না পাঠাবে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কঠোর হতে বাধ্য হবে।
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) নাসরীন মুক্তি স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
• ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্যানেল পাঠানোর নির্দেশ
• এরপরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
এতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের শূন্যপদ পূরণের জন্য তিন জনের প্যানেল প্রস্তাব গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ করা হলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তা পাঠায়নি। পরে একই বছরের ৮ অক্টোবর মধ্যে প্রস্তাব পাঠাতে ফের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত প্রস্তাব পাওয়া যায়নি। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আবশ্যিকভাবে নাম পাঠাতে হবে, না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী উল্লেখিত তিন পদে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। রাষ্ট্রপতি এসব পদে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব পদে নিয়োগের জন্য যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে তাদের বয়স যেন ৭০ বছরের ঊর্ধে না হয়। এছাড়া তিন জনের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে বলা হয়েছে।
৭ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই
মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, ব্রিটেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ তিনটি পদই শূন্য।
উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ নেই ১৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে
উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য রয়েছে ১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এগুলো হলো- সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, দি পিপল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়্যাল ইউনিভার্সিটি, হামর্দদ বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়, চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, ফারইস্ট ইউনিভার্সিটি ও এনপিআই ইউনিভার্সিটি।
উপ-উপাচার্য নেই ৩৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে
আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি- বাংলাদেশ, ইস্টার্ণ ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস), অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ফাস্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঈশাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে নেই উপ-উপাচার্য।
এ তালিকায় আরও রয়েছে জেডএইচ সিকদার সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, ফেনী ইউনিভার্সিটি, নর্থ ওয়েস্টার্ণ ইউনিভার্সিটি, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, টাইমস ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রনদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, রবীন্দ্র মৈত্রী ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ।
কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য ৭টিতে
নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটি, ইনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনির্ভাসিটি অব ডেভলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, স্টামফোর্ড ইউনির্ভাসিটি-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) এবং প্রেসিডেন্সী ইউনিভার্সিটিতে কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী দেশে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১৩টিতে এখনও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩১ নম্বর ধারায় সুলিখিত শর্ত উল্লেখ আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানাভাবে নিযুক্তরা ভিসির দায়িত্ব পালন করছেন।
তাদের কেউ স্বঘোষিত। কেউ আছেন তথাকথিত দায়িত্বপ্রাপ্ত। কিন্তু আইনের দৃষ্টিতে ভিসি হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর বা রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, যিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। অথচ রাষ্ট্রপতির অধিকারও খর্ব করে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটি ‘ডেজিগনেটেড’ নামে ভিসি নিয়োগ দিচ্ছে। এই বিধিবদ্ধ নিয়ম যারা মানছেন না তারাই বেআইনি কাজ করছেন।
এনএম/এইচকে