অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম খান ও আহসানুল হাদী

শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করে সশরীরে পরীক্ষা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ। বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৭ম সেমিস্টারের পরীক্ষা রোববার (২০ জুন) দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।

পরীক্ষায় বিভাগের ৮১ শিক্ষার্থীই অংশ নেয়। শিক্ষার্থীরা সবাই আবাসন নিশ্চিত করতে পারলেও চার জন ছাত্রী আবাসন সমস্যায় ভুগছিলেন। তাদের জন্য এগিয়ে এসেছেন বিভাগের দুই শিক্ষক। তারা হলেন- বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা ও সহকারী অধ্যাপক আহসানুল হাদী এবং অধ্যাপক ড. কেএম সাইফুল ইসলাম খান।

আবাসন সমস্যায় থাকা শায়লা ফারজানা মিতুসহ আরও দুই ছাত্রী ছিলেন অধ্যাপক আহসানুল হাদীর বাসায়। অন্যজন ছিলেন অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম খানের বাসায়। নিজ বাসায় রেখে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সুযোগ করে দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন এই দুই শিক্ষক।

শিক্ষকের বাসায় থাকা মিতু জানান, ‘আমিসহ আরও কয়েকজন মেয়ের আবাসন সমস্যা ছিল। আমাদের স্যারদের বাসায় রেখে আবাসন সমস্যার পূর্ণ সমাধান করে পরীক্ষা নিয়েছে বিভাগ। শিক্ষকদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তাছাড়া আমাদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে আমাদের বিভাগ।’

একই বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রাবনী ইসলাম বলেন, ‘ডিপার্টমেন্টের বর্তমান চেয়ারম্যান স্যার খুবই আন্তরিক এবং শিক্ষার্থীবান্ধব। তাছাড়া ছাত্র উপদেষ্টা স্যারসহ শিক্ষকরা অনেক আন্তরিক। ওনাদের তত্ত্বাবধানেই পরীক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।’

বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আবু ইসহাক বলেন, ‘এই বিভাগের শিক্ষকরা বরাবরই শিক্ষার্থীবান্ধব। শুধু পরীক্ষার সময়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েই ক্ষান্ত হননি। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ভর্তি হতে না পারা অনেক শিক্ষার্থীকে বিভাগের শিক্ষকরা সরাসরি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

এমন শিক্ষক সব বিভাগেই প্রয়োজন উল্লেখ করে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘এমন শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক সব বিভাগেই প্রয়োজন। তাহলে সব শিক্ষার্থী আস্থা খুঁজে পেত। স্যারদের স্যালুট জানাই।’

শিক্ষার্থীদের নিজ বাসায় থাকার সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক আহসানুল হাদী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি যখন দেখলাম তারা থাকার কোনো জায়গা পাচ্ছিল না, কারো থেকে সহযোগিতা পাচ্ছিল না, তখন তাদেরকে আমার বাসায় থাকতে বলি। একদম আমার ফ্যামিলি মেম্বারদের মতো করে তাদের রাখার চেষ্টা করেছি।’

অধ্যাপক ড. কেএম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিভাগের চেয়ারম্যান আমাকে এই ছাত্রীর বিষয়ে জানান। তখন আমি ঐ ছাত্রীকে থাকার ব্যবস্থা করে দেই। আশা করি সে পরিবারের সদস্যের মতো সবগুলো পরীক্ষা এখান থেকে দিতে পারবে। শিক্ষার্থীরা আমাদের ছেলেমেয়ে, তাদের দেখার দায়িত্ব আমাদের।’

এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ বাহাউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের ৮১ জন শিক্ষার্থী সবাই আজ পরীক্ষায় উপস্থিত হয়েছে। ১০-১৫ জনের সমস্যা ছিল, আমরা তাদের সেভাবে সহযোগিতা করেছি। অনেক ছাত্রকে মেসে উঠিয়ে দিয়েছি, অনেককে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছি। আর মেয়েদের যাদের ঝামেলা ছিল, তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাসায় এবং আমাদের দুই জন শিক্ষকের বাসায় রেখেছি। সব মেয়ে ও ছেলে যথাসময়ে এসে পরীক্ষায় উপস্থিত হয়েছে।’

পরীক্ষার হল পরিদর্শনে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, ‘কঠিন সময় থাকলেও শিক্ষার্থী ও বিভাগের যৌথ ব্যবস্থাপনায় শতভাগ উপস্থিতিতে আজকে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এটি খুবই আশাবাদী ও ইতিবাচক পদক্ষেপ। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। সার্বিক সহযোগিতার ভিত্তিতে যে বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করবে তাদেরও পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকলেও শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। শিক্ষকরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে এটিই তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবোধ। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমন্বয় করে  বিভাগগুলোকে পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে।’

এইচআর/জেডএস