তার কাছে ফোন কল মানেই- ‘কাজে ফিরে যাও’। এমনই এক কল পেয়েছিলেন জেনিফার ওয়েং, যা তাকে আবারও কাজের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এই কলটি কাজের নয়, খুশির বার্তার।

ওয়েং ৫ বছর বয়সেই পরিবারের টেক্স-মেক্স রেস্টুরেন্টে সহায়ক হিসেবে কাজ শুরু করেছিল। তার বাবা-মা মান্দারিয়ান ভাষায় কথা বলতো। এ কারণে রেস্টুরেন্টের ফোন কল রিসিভ করে বাবা-মাকে বুঝিয়ে বলার কাজটি করত সে। ফিফথ গ্রেডে পড়া অবস্থায় ওয়েং ফোন কল রিসিভ করা শুরু করে।

তাকে হাই স্কুলে যেতে সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠতে হতো। স্কুল শেষে রেস্টুরেন্টের কাজে লেগে যেত সে। করোনা মহামারিতেও সে রেস্টুরেন্টে কাজ করে গেছে। এর মধ্যে সে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে। ১৮ বছরের ওয়েংয়ের ভাষ্য, ‘আমি এককভাবে বাবা-মাকে সংগ্রাম করতে দিতে পারি না।’

পরিশ্রমের মূল্যায়ন পেয়েছেন ওয়েং। স্থান পেয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটির মেধাবী শিক্ষার্থীর তালিকায়। এবছর ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস কলেজ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম’র আওতায় বৃত্তি পাচ্ছেন ১২ শিক্ষার্থী। বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা দারিদ্র্য, বুলিং, শারীরিক ও মানসিক সংকট ও পারিবারিক শোক কাটিয়ে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করে তুলেছে।

এসব শিক্ষার্থী একটি লক্ষ্যের কথা ব্যক্ত করেছেন- উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা, যা নিজের জন্য নয় বরং পরিবার ও সমাজের জন্য।

এই প্রোগ্রামের আওতায় বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ১৫ হাজার ডলার করে প্রতিবছর অর্থসহায়তা পাবেন। ১৯৯৯ সাল থেকে এই কর্মসূচির আওতায় শত শত কলেজ শিক্ষার্থীকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

এবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজন বাংলাদেশি রয়েছেন। তারাও একই পরিমাণ অর্থসহায়তা পাবেন। এ দুজন হলেন- সামিয়া আফরিন ও লামিয়া হক।

বৃত্তি পাওয়া ১৭ বছর বয়সী সামিয়া আফরিন বলছিলেন, ‘ক্যারিয়ারের পথ যেমনই হোক, এটি মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতিতে এবং সহজ করতে সহায়ক হবে।’ 

সামিয়া ১০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ব্রুকলিনে একটি মুসলিম পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। তিনি ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবেন।

বৃত্তি পাওয়া আরেক বাংলাদেশি লামিয়া হক। তার বয়স ১৮। তিনি বাংলাদেশি হক পরিবারের বড় সন্তান। তাকে পরিবারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে লড়াই করতে হয়েছে। লামিয়া ম্যাসাচুসেটসের উইলিয়ামস কলেজে অপরাধ আইনে পড়াশোনা করবেন।

বৃত্তি পাওয়া সবার বয়স ১৮ বছরের কম। এই বৃত্তি তাদের লড়াইয়ে সহায়ক হবে বলে আশা নিউ ইয়র্ক টাইমস কর্তৃপক্ষের।

এসএসএইচ