দাবি আদায়ে বারবার আন্দোলনে নামতে হয়েছে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ১২০ কোটি এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের জন্য ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ হতে পারে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। 

তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, স্কুল-কলেজের জন্য ১০০ কোটি এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত এ খাতে কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে তা চলতি সপ্তাহেই চূড়ান্ত হবে।  

এ বরাদ্দে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, শিক্ষায় সবচেয়ে অবহেলিত নন-এমপিও শিক্ষকরা। বিষয়টি মানবিক‍ দৃষ্টিতে দেখার দাবি জানিয়েছেন তারা। তাদের দাবি, স্তর পরিবর্তনসহ এখন এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্য আছে সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সবাইকে এমপিওভুক্ত করতে হলে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।

দীর্ঘ ৯ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ২ হাজার ৭৩০টি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিভুক্ত করে সরকার। এর মধ্যে স্কুল-কলেজ ছিল ১ হাজার ৬৫১টি। আর কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের অধীন মাদরাসা ৫৫৭টি এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৫২২টি। 

নতুন এমপিও দেওয়ার সময় প্রধানমমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঘোষণা দেন প্রতিবছর নতুন এমপিও দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। 

কিন্তু নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও করার জন্য ২০১৮ সালের যে নীতিমালা ছিল তা সংশোধনের উদ্যোগ নেয় শিক্ষামন্ত্রণালয়। সেজন্য পরের দুই অর্থবছরে এ খাতের জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। সেজন্য নতুন করে কোনো আবেদন নিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

সম্প্রতি এ নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। নতুন প্রতিষ্ঠানের আবেদন নেওয়ার জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করছে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও দেওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ হওয়ার পর ২০২১-২২ অর্থবছরে নতুন এমপিওভুক্তির জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। এরমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ২০০ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের জন্য চাওয়া হয় ১০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে স্কুল-কলেজের জন্য ১২০ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের জন্য ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ হতে পারে।

জুলাই মাসে বাজেট পাসের পরপরই নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেওয়া শুরু করবে শিক্ষামন্ত্রণালয়। তবে এ টাকা দিয়ে কত সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেওয়া যাবে তার হিসেব করবে মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার জন্য ২০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। তবে পুরো টাকা দেবে না বলে শুনেছি। কিছু কম করে নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ থাকবে সেটা জানি।

বাজেটের দিকে তাকিয়ে ৮৫ হাজার নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী
আসন্ন বাজেটের দিকে তাকিয়ে আছেন সাড়ে ৬ হাজার নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। কত টাকা বরাদ্দ থাকবে সেদিকেই সবার নজর। গত দুই বছরে এমপিও না হওয়ায় হতাশা থাকলেও এবার তারা আশায় বুক বেঁধেছেন। তাদের দাবি, সরকার যেন বিষয়টি মানবিকভাবে দেখে।

ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসন্ন বাজেটের দিকে আমরা সবাই তাকিয়ে আছি। সরকার যেন অসহায় এ শিক্ষকদের মুখের দিকে তাকায়। 

তিনি বলেন, আমরা এখনো জানি না কত টাকা বরাদ্দ আছে। যদি ১৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়, তবে তা খুবই কম। এ টাকা দিয়ে কয়টা প্রতিষ্ঠান এমপিও করতে পারবে? বাজেট ঘোষণার পর তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি দেবো।

শিক্ষায় বরাদ্দ থাকছে ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা
আসছে অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রস্তাবিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৬ হাজার ৪৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ এককভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মোট বরাদ্দ থাকবে ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা।   

চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) খাতভিত্তিক মোট বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে; যা ছিল মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। গত বছর সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচালন (সেবা) খাতে ১৫ হাজার ৫৩৬ কোটি এবং উন্নয়ন খাতে ৯ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ মন্ত্রণালয়ের দুই খাত মিলিয়ে মোট ২৪ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সেবা খাতে ২১ হাজার ২৫২ কোটি এবং উন্নয়ন খাতে ১১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। উভয় খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয় ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে চলতি অর্থবছরের জন্য ৮ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে সেবা খাতে ছয় হাজার ৩৬৮ কোটি এবং উন্নয়ন খাতে এক হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।

আসছে অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ৩৬ হাজার ৪৩১ কোটি ৭০ লাখ এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রেখেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

শিক্ষাসংশ্নিষ্ট তিন মন্ত্রণালয় মিলে গতবারের চেয়ে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে করোনার ছোবলে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার নানা উদ্যোগ নেওয়া যাবে।

বাজেটে বরাদ্দ অনুযায়ী প্রতি জেলায় একটি করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনার কাজ আগামী অর্থবছরে আরও এগিয়ে নেওয়া হবে। ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ঝালকাঠি, বগুড়া, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খাগড়াছড়ি, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, ফরিদপুরসহ বহু জেলায় কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। প্রাথমিকে শিশুদের স্কুল ফিডিং কার্যক্রমও জোরদার করা হবে। ঝরে পড়ার হার কমাতেও নেওয়া হবে বিশেষ উদ্যোগ। ই-লার্নিং খাতেও আসন্ন বাজেটে সরকারের গুরুত্ব বাড়বে। করোনাকাল পার হলেও অনলাইন শিক্ষা চালু থাকবে। ক্লাসরুমে সশরীরে ও অনলাইনে- দুইভাবেই পাঠদান চালু রাখা হবে।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, এবার বাজেটে করোনা পরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রম পুনরুদ্ধারের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আশা করি অর্থ মন্ত্রণালয় সেটি দেবে।

এনএম/এনএফ/জেএস