করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থীর অনেক ধরনের মানসিক সমস্যা হচ্ছে। অনেকে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে, অনেকে অপুষ্টিতে ভুগছে। 

এসব বিষয় মাথায় রেখে দুই লাখ শিক্ষককে মানসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্কুল খোলার পর তারা শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও মানসিক বিভিন্ন বিষয় দেখে প্রয়োজনীয় কাউন্সিলিং করবেন।

বুধবার (২৬ মে) দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান ছুটি ও শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসে এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী।  

মন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যে কিশোর অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা নানা ধরনের ডিভাইস, গেইমের মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। স্কুল-কলেজ খুললে তাদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা থেকে যেতে পারে। তাই বিষয়টি আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি।

তিনি  বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রতি জেলায় অন্তত একজন করে মানসিক বিশেষজ্ঞের পদ সৃষ্টি করা। পদ তৈরি করার কাজটি সময়সাপেক্ষ বলে এ মুহূর্তে আমরা আমাদের শিক্ষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। দেশের স্বনামধন্য মানসিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় আমরা প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল প্রস্তুত করে ৫৪০ জন শিক্ষক/কর্মকর্তার ওপর পাইলটিং করে তা চূড়ান্ত করেছি। এখন আমরা দুইশ জন মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করছি। এরপর ফেস টু ফেস এবং অনলাইনে আমরা অন্তত দুই লাখ শিক্ষককে এ প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসব।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে পুষ্টি বিষয়ে প্রায় ১ লাখ শিক্ষক/শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রায় ২০ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওজন মাপার যন্ত্র সরবরাহ করেছি, যাতে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) হিসেব করে তাদের স্বাস্থ্য মনিটর করতে পারে। এছাড়াও আমরা ইতোমধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচ কোটি আয়রন ফলিক এসিড সরবরাহ করেছি ।

মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইমেন্টকে আনন্দময় ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য যারা বিভিন্ন বিষয়ে সাফল্যের সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অলিম্পিয়াডের আয়োজন করেন বা তাতে অংশগ্রহণ করেন, তাদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।

এসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা এখন প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে একেবারে ব্যক্তিগত যে সমস্যাগুলো আছে তা জানার চেষ্টা করছি। আশা করছি এ মাসের মধ্যেই আমরা সব তথ্য-উপাত্ত পেয়ে যাব। সামনের মাস থেকেই আমরা সেই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেব। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারি বা না পারি, আগামী দু মাসের মধ্যে যেন সব শিক্ষার্থী কোনো না কোনোভাবে প্রয়োজনীয় শিখন প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে পারে সেই সুযোগ সৃষ্টি করা।

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আরও যুক্ত ছিলেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক, প্রাথমিক শিক্ষা অফিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. সাজ্জাদুল হাসান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ।

এনএম/আরএইচ