করোনার টিকা দিতে শিক্ষার্থীদের জন্য আসছে বিশেষ অ্যাপ
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনা টিকার আওতায় আনার পর ক্লাস রুমে ফেরানো হবে- সরকারের এমন ঘোষণার পর টিকা সংকটসহ নানা কারণে সেটিতে ভাটা পড়ে। এরমধ্যে প্রধান কারণ ছিল অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকা, থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তা সংরক্ষিত না থাকা। সেজন্য ঘোষণা দিয়েও আবাসিক ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা যায়নি।
এ জটিলতা নিরসন করতে এবার শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা একটি অ্যাপ করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহায়তায় এ অ্যাপের মাধ্যমে শুধু শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
সূত্র মতে, শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, বিশ্ববিদ্যালয় নতুন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী, যাদের বয়স ৪০ এর কম তারাও এ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে বিশেষ ব্যবস্থায় টিকা নিতে পারবেন। আর যে শিক্ষার্থীদের বয়স ১৮ বছর হয়নি বা জাতীয় পরিচয়পত্র পায়নি, তারা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে এ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবেন।
ইউজিসির তথ্য মতে, সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ৩ লাখ। তাদের মধ্যে ১২০টি আবাসিক হলে ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর আসন থাকলেও মূলত হলগুলোতে থাকেন ২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বশেষ ৯১ হাজার শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। তাদের পুরো তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে দিয়েছে ইউজিসি। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৩ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীর তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ অ্যাপের মাধ্যমে বিশেষভাবে তারা নিবন্ধন করতে পারবে।
এ ব্যাপারে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা দুটি তালিকা দিয়েছি। প্রথম- যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে, এরকম ৯১ হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে ১২ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর। দ্বিতীয় তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থী। সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত নেয় সেভাবে তাদের টিকা দেওয়ার সব প্রস্তুতি আমাদের আছে।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা যাতে দ্রুত ও ঝামেলাবিহীন টিকা পায় সেজন্য তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সহায়তায় একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। এ অ্যাপে আমরা যাদের তথ্য ইনপুট দিয়ে রাখবো সেই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নিবন্ধন করতে পারবেন। পরবর্তীতে সরকার যখন সিদ্ধান্ত নেবে সকল শিক্ষার্থীকে করোনা টিকার আওতায় আনা হবে তখনই তাদের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হবে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে টিকা পাওয়া-না পাওয়ার ওপর।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য ইউজিসি দুই ধরনের অপশন রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছে। প্রথমটি- যারা আবাসিক শিক্ষার্থী তাদের টিকার আওতায় আনা। দ্বিতীয়টি- জাতীয় পরিচয় ও পরিচয়পত্র ছাড়া আবাসিক, অনাবাসিক সকল শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা। সরকার যেটাকে সুবিধাজনক মনে করে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে। তবে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে সব শিক্ষার্থীকে করোনা টিকার আওতায় আনার সুপারিশ করেছে ইউজিসি।
ইউজিসির সঙ্গে একমত পোষণ করে একই ধরনের মত দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা নিজেরাই চাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হোক। সেজন্য আমার মত, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ব্যাচ ও বিভাগ অনুযায়ী সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।
এনএম/এনএফ