রোস্টার করে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার মত ইউজিসির
করোনা সংক্রমণ কমতে থাকায় সরকারি বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। গণপরিবহনসহ প্রায় সবকিছুই স্বাভাবিক হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। এরমধ্যে সারাদেশে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এ অবস্থায় শিক্ষার স্থবিরতা কাটাতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রোস্টার করে খুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
তার আগে সব শিক্ষার্থীকে করোনা টিকার আওতায় আনার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। এরমধ্যে সারাদেশের ১২০টি আবাসিক হলের ৯১ হাজার শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থীর সকল তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করা এই সংস্থাটির ভাষ্য, দুই ধরনের অপশন রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। প্রথমটি- যারা আবাসিক শিক্ষার্থী তাদেরকে টিকার আওতায় আনা। দ্বিতীয়টি- জাতীয় পরিচয় ও পরিচয়পত্র ছাড়া আবাসিক, অনাবাসিক সকল শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা। সরকার যেটাকে সুবিধাজনক মনে করে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে। তবে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে তারা।
জানতে চাইলে মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে আমরা দুটি মত দিয়েছি। প্রথমটি হলো, সকল শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় এনে তারপর ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়া। সেটি সম্ভব না হলে রোস্টার করে অনুষদ বা বিভাগভিত্তিক শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন দিনে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আসা। এভাবে শিক্ষার্থীদের সামাজিক দূরত্ব মেনে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। তেমনি সব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে রাখা যাবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকারের।
ইউজিসি সঙ্গে একমত পোষণ করে একই ধরনের মত দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা নিজেরাই চাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হোক। সেজন্য আমার মত, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ব্যাচ ও বিভাগ অনুযায়ী সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, মফস্বলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। কারণ, আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামে বসবাস করে। অনেকের আর্থিক সমস্যা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ব্যাচ ও ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এতে হল কিংবা ক্লাস প্রতিটা জায়গায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
টিকা দিয়ে ক্লাস চালুর প্রস্তাব ইউজিসির
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্যমতে, সরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। তাদের মধ্যে ১২০টি আবাসিক হলে ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। ইউজিসি বলছে, আবাসিক হলে কাগজে-কলমে ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর কথা বলা হলেও মূলত হলগুলোতে থাকে দুই লাখের বেশি শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৯১ হাজার শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। তাদের সবাইকে করোনা টিকার আওতায় আনার প্রস্তাব করেছে মঞ্জুরি কমিশন। সম্ভব হলে আবাসিক-অনাবাসিক সবাইকে করোনা টিকার আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এনএম/এইচকে