শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে সোমবার প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা

অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ১২টি ছাত্র সংগঠন। দাবি না মানলে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে। আর তখন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় সংগঠনগুলো।

মঙ্গলবার (২৫ মে) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্র নেতারা বলেন, করোনায় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি সরকারের অবহেলা ও উদাসীনতায় জাতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ অবস্থা অব্যাহত থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রশাসনের কাণ্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত শুধু শিক্ষার্থীদের নয় বরং পুরো দেশবাসীকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে।

দেশের অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকান, বাজার, মার্কেট, যানবাহনসহ সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে। শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ভার্চুয়াল ক্লাসের কথা বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান তারা।

বিবৃতি দেওয়া ছাত্র নেতারা হলেন- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবী, জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি কাজী ফয়েজ আহমেদ, জাগপা ছাত্র লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান ফারুকী, বাংলাদেশ ছাত্র মিশনের (ইরান) সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ মিলন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ মনির হোসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি জাকির বিল্লাহ, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের সভাপতি সুহাইল আহমদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সমাজের সভাপতি জাবের হোসাইন, ইসলামী ছাত্র খেলাফতের সভাপতি বাংলাদেশ আবুল হাসিম শাহী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের সভাপতি তারেক বিন হাবিব, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি সৈয়দ মো. মহসিন, জাতীয় ছাত্র পার্টির সভাপতি সোহেল রানা।

বিবৃতিতে তারা বলেন, দীর্ঘ সময় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় মনোযোগ ও আগ্রহ হারাচ্ছে। অন্যদিকে শিশু-কিশোরদের মোবাইল এবং ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি বাড়ছে। তরুণ-যুবকরা অহেতুক অতিরিক্ত সময় ইন্টারনেটে কাটাচ্ছে। এতে করে অনেকের আচরণগত সমস্যা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের মানসিক ও মেধার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নিয়মতান্ত্রিক জীবনে অনভ্যস্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ফলে অনেকেই অনৈতিক কার্যকলাপ, নেশা ও উশৃঙ্খলতায় জড়িয়ে যাচ্ছে। উঠতি বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিশোর গ্যাং নামক ধ্বংসাত্মক সংস্কৃতির প্রসার ঘটছে। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় উচ্চ শিক্ষিত বেকার শিক্ষার্থীদের বিরাট অংশ চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না।

করোনা পরিস্থিতিতে সরকার বিভিন্ন খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিলেও শিক্ষার্থীদের দুরবস্থাকে চতুরতার সঙ্গে এড়িয়ে যাচ্ছে। করোনাকালে শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবন যাপন করলেও তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করছে না বলে জানান তারা।

অন্যদিকে অতিরিক্ত হারে সেশন ফি-সহ অন্যান্য ফি-জরিমানা, বেতন বহাল রাখা হয়েছে। সরকার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তামাশা শুরু করেছে। সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রশাসনের সার্বিক দায়িত্বহীন আচরণে মনে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের নূন্যতম কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এটা কোনো সভ্য দেশের চিত্র হতে পারে না।

নেতারা আরও বলেন, অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে জোর দাবি উঠেছে। তাদের দাবি যৌক্তিক এবং এ দাবী শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারের সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে বিবেকবান সবাই একমত। শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই বার বার এ দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার কোনোভাবেই তাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি।

এ সময় নেতারা চাকরিতে প্রবেশে বয়সের সময় বৃদ্ধির দাবি জানান। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের প্রতি এমন দায়িত্বহীন আচরণ অব্যাহত রাখলে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে।

এনএম/এমএইচএস