বাংলাদেশের ইতিহাসে কেন্দ্রীয় বা পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্রে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলার নজির থাকলেও সরাসরি পরীক্ষার হলে হামলার ঘটনা বিরল। গত প্রায় দুই দশক ধরে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজ কেন্দ্রে চালানো হয়েছে তাণ্ডব। এতে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন।

জানা গেছে, এই দুটি কেন্দ্রে প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা কেউই পুরো পরীক্ষা শেষ করতে পারেননি। পরীক্ষার্থী পরিচয় দেওয়ার পরও হামলাকারীরা শ্রেণীকক্ষে ঢুকে তাদের পিটিয়েছেন। অনেকের খাতাও ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। আবার কিছু শিক্ষার্থীর খাতাও লুট হয়ে গেছে। যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। 

বিশেষ করে বিকেলের দিকে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচেও পাওয়া গেছে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার খাতা। আর এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে খোদ রাজধানীর প্রায় ৩৫টি (কম-বেশি হতে পারে) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ শিক্ষাবিদরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

যা ঘটেছিল পরীক্ষার হলে 

রোববার (২৪ নভেম্বর) সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে কি ঘটেছিল জানতে পরীক্ষার হলে উপস্থিত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে ঢাকা পোস্ট। তাদের মধ্যে আরিফুল হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ওই দিন বেলা সাড়ে ১২টায় আমাদের পরীক্ষা শুরু হয়। আনুমানিক প্রায় ৩০ মিনিট পর নিচ থেকে অর্থাৎ কলেজের মেইন গেট থেকে আমাদের কানে বিকট আওয়াজ আসে। যা উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। কিন্তু আমরা সবাই পরীক্ষায় মনোযোগ রাখার চেষ্টা করি। এরই মধ্যে কলেজের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা (হামলাকারীরা)।

এই শিক্ষার্থী বলেন, তাদের সবার হাতে লাঠি, কাঠ, হাতুড়ি, রাম দা ছিল। এক পর্যায়ে তারা কলেজের ভেতরে পরীক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মেইন গেট ভেঙে কলেজের ভেতর প্রবেশ করে তাণ্ডব চালানো শুরু করে। নিচে ভাঙচুর শেষ হলে তারা ভবনের উপর তলার দিকেও ছুটে আসে। সেখানে পরিস্থিতি আঁচ করে আগে থেকেই গেট লাগিয়ে দেওয়া হলেও সেটি ভেঙে তারা পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশ করে। এমন অবস্থায় কক্ষে ডিউটিরত শিক্ষকরা (পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষকরা) তাদের (হামলাকারীদের) বুঝানোর চেষ্টা করেন। 

শিক্ষকরা বলেন, বাবা তাদের কিছু করো না, সবাই পরীক্ষার্থী।

পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকা এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, তারপরও পরীক্ষার্থীদের রেহাই মেলেনি। তারা পরীক্ষার হলে থাকা অনেক মেয়েদেরও আঘাত করেন। অনেক হলে দরজা লাগিয়ে দেওয়া হলেও সেটি ভেঙে হামলা করা হয়েছে এবং খাতা লন্ডভন্ড করা হয়েছে। এরপর আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে কয়েকজন মিলে একটি বিভাগে অবস্থান নেই। কিন্তু সেখানেও হামলা চালানো হয়। শিক্ষকরা আমাদের কোনোরকমে বাঁচিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর সেখান থেকে বাইরে বের করে দেন। 

একটি কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদেরও এমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত বিস্ময়কর।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজ

ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ সবচেয়ে কম জায়গা এবং অল্প অবকাঠামো নিয়ে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা দিয়ে আসছে। নানা প্রতিবন্ধকতা এবং জরাজীর্ণতায় প্রতিষ্ঠান দুটি আড়ষ্ট। এরমধ্যে এরকম হামলার ঘটনায় দুটি ক্যাম্পাসই বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১৭টি বিভাগই তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে শিক্ষক মিলনায়তন, একজন শিক্ষকের প্রাইভেটকার, চারটি মোটরসাইকেল, অ্যাম্বুলেন্স, কলেজের নেম প্লেট, মনোগ্রাম, ছাত্রসংসদ কক্ষসহ পাঠাগার ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীকে ভাঙচুর শেষে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতেও দেখা গেছে। এক শিক্ষার্থীকে শিক্ষকের টেবিলে পা তুলে বসে থাকতেও দেখা গেছে।

তবেকেন্দ্রীয় পরীক্ষা চলার কারণে নিয়মিত ক্লাস বন্ধ থাকায় কলেজে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছিলেন না। কিন্তু সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা করেছেন এ দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

প্রশাসনিক সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলি মুখোপাধ্যায়। একইসঙ্গে হামলা থেকে পরিত্রাণ পেতে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

অধ্যক্ষ বলেন, গতকাল দুপুর সোয়া একটার দিকে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রথম বর্ষ সম্মান সমাপনী পরীক্ষা চলছিল। সে সময় অতর্কিত যাত্রাবাড়ী ডেমরা রোডে অবস্থিত ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ (ডিএমআরসি) এবং অন্যান্য কলেজের সহস্রাধিক ছাত্রের একটি দল প্রধান ফটক ভেঙে কলেজের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমি বার বার পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীকে ফোন দিয়ে সন্তোষজনক কোনো সাড়া পাইনি। বিষয়টি মাউশির ডিজি, মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সহায়তা পাইনি।

তিনি বলেন, এসময় ছাত্ররা কলেজ ভাঙচুর করে এবং কেন্দ্রে পরীক্ষারত পরীক্ষার্থীদের আহত করে বের করে দেয়। তারা কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত শিক্ষকদের গাড়ি, মোটরসাইকেল, কলেজের মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে এবং কলেজের ১৭টি বিভাগের প্রতিটিতে হামলা চালায়। সব বিভাগ ও শ্রেণিকক্ষের আসবাবপত্র, ফ্যান, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার এবং অফিস ও প্রতিটি
বিভাগের আলমারি ভেঙে নগদ অর্থ লুট করে। 

প্রতিটি বিভাগের বুক সেলফ, অফিসে রক্ষিত শিক্ষার্থীদের মার্কশিট, সনদপত্র, ভর্তি ও ফরম পূরণের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং বিভাগের বিভিন্ন বই-পুস্তক ও অন্যান্য মালামাল তছনছ করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। সে সময় ডা. মাহাবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) অধ্যক্ষকে বারবার বিষয়টি অবগত করার জন্য ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান ২ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দুটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষরা।

কবি নজরুল সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। তারা পাল্টা আক্রমণে যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, কেউ কোনো গ্রুপে উসকানিমূলক কিছু লিখবে না এবং শান্ত থাকবে।

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, সোহরাওয়ার্দী কলেজের শান্তিপ্রিয় শিক্ষার্থীরা অঙ্গীকারবদ্ধ, তারা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাবে না। যদি কোনো সন্ত্রাসী এই সুযোগের অপব্যবহার করে তবে এর জন্য সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রশাসন, শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ এবং ছাত্র-ছাত্রীরা দায়ী থাকবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

পরীক্ষা কেন্দ্রে হামলার ঘটনার নজিরবিহীন, শিক্ষকদের ক্ষোভ

কেন্দ্রীয় পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাত কলেজের শিক্ষকরা।

তারা বলছেন, একটি কেন্দ্রীয় পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। আর ঢাকার বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পড়া উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছেন। যা নজিরবিহীন।

নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষক বলেন, পরীক্ষার হলে সরাসরি হামলার মতো ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক এবং শিক্ষার পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। কলেজ প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন সম্মিলিতভাবে যদি শিক্ষার্থীদের এই নিরাপত্তাটুকু নিশ্চিত করতে না পারে তাহলেই শিক্ষার্থীরা কার ভরসায় পরীক্ষার হলে আসবেন। কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় সরাসরি হামলার নজির খুবই বিরল।

এই শিক্ষক আরও বলেন, কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় হামলার মতো ঘটনা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ঢাবি উপাচার্যের কার্যালয়ে বৈঠক

পরীক্ষার হলে হামলা, খাতা লুট এবং অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতেই পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কাকলি মুখোপাধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে মিটিং হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে স্নাতক ১ম বর্ষের পরীক্ষা কীভাবে চলবে। একইসঙ্গে গতকালের পরীক্ষা বাতিল হবে কি না সে বিষয়েও সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সূত্রপাত

জানা গেছে, ভুল চিকিৎসায় রাজধানীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছেন এমন অভিযোগে সহিংসতার সূত্রপাত হয়।

হামলাকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, অভিজিতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ২০ ও ২১ নভেম্বর হাসপাতাল অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ এ দুই দিন ন্যাশনাল মেডিকেলের পক্ষ নিয়ে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালান। এ হামলাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে ‘ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ’ নামে একটি গ্রুপে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন এবং অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবিতে আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে একত্রিত হন।

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় আমাদের কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ মারা গেছেন। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাতে গেলে নজরুল কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলা চালান। এর প্রতিবাদে ৩৫টির বেশি কলেজের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে কর্মসূচি পালন করেন।

আরএইচটি/এমএসএ