অধিভুক্তি বাতিল করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি এঁকেছেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। এতে স্থান পেয়েছে অধিভুক্তি বাতিলের দাবি সংবলিত বিভিন্ন ছবি ও স্লোগান।

রোববার (২৭ অক্টোবর) কলেজগুলোর মূল ফটক, প্রশাসনিক ভবনে এসব গ্রাফিতি আঁকতে দেখা গেছে।

এ ছাড়া সোমবার (২৮ অক্টোবর) একই দাবিতে বিভাগ ভিত্তিক গণসংযোগ এবং মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকা কলেজে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের পক্ষ থেকে এসব কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের ছাত্রদের নানা সংকট এবং সমস্যা অনেক। নিয়মিত তদারকির অভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে কলেজ প্রশাসনের। তাছাড়া সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হলেও কোনো সুযোগ-সুবিধা ছাত্রদের কাছে পৌঁছায় না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দূরত্বের কারণে অনেক বিষয় দ্রুত সমাধান হয় না, ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাছাড়া শিক্ষার মান ও শ্রেণিকক্ষ সংকটও চরম আকার ধারণ করেছে। সাতটি কলেজেই শ্রেণিকক্ষ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব ব্যাপক। অনেক কলেজে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন চাপের মধ্যে পড়েন। এ ছাড়া শিক্ষক ও স্টাফের সংখ্যাও অপর্যাপ্ত। এসব বিষয় শিক্ষার মানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।

ফাহিম মুন্তাসির নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, সাত কলেজে পরীক্ষা শুরু ও ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণে দেরি হয় এবং ফল প্রকাশেও দীর্ঘ বিলম্ব হয়। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। এই বিলম্বে অনেক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা বা চাকরির সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া সাত কলেজে সেশনজট একটি বড় সমস্যা।

শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন— ঢাবির অধীনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সামনে বর্তমানে যেসব সমস্যাগুলো বড় আকারে দেখা দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ের অভাব। এ ছাড়া বিভাগভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, গবেষণার সুযোগের অপ্রতুলতা, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের অনুপস্থিতি, শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট, ল্যাব সংকট, আবাসন সমস্যা, পরিবহণ সংকট, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব, অ্যাকাডেমিক সিলেবাস অসম্পূর্ণ থাকাসহ পরীক্ষা মূল্যায়নে গণহারে ফেল করিয়ে দেওয়ার মতো সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে সমাধানহীনভাবে চলছে।

সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পারসন আব্দুর রহমান বলেন, সাত কলেজের এসব সমস্যা নিরসনে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের কোনো বিকল্প নেই।

এখানে প্রশাসনিক কাজে ধীরগতি ও দায়িত্বে অসামঞ্জস্যতা আছে। আর এই সংকটগুলোর সমাধানের জন্যই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমাদের দাবি হচ্ছে সাতটি কলেজকে নিয়ে আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করতে হবে। সেজন্য আমরা তিন দফা দাবিও জানিয়েছি। এটি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমিকভাবে আমাদের আন্দোলন চলবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে এই একই দাবিতে গত ২১ অক্টোবর এবং ২৩ অক্টোবর সাইন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে ২ দফায় ২৪ ঘণ্টা করে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনকল্পে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আরএইচটি/এসএসএইচ