গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ করার পর থেকেই অচলাবস্থা বিরাজ করছে দেশের উচ্চশিক্ষায় নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি)। চেয়ারম্যান পদত্যাগ করার পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেয় সরকার। কিন্তু ইউজিসি কর্মকর্তাদের বাধা, বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের আলটিমেটামে যোগদান করতে পারছেন না ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। শুধু তিনি নন, অন্য চারজন সদস্যও অফিস করছেন না। এ ছাড়া সাবেক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

কর্মকর্তারা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১১ আগস্ট চেয়ারম্যান পদ থেকে অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ পদত্যাগ করেন। এরপর ২৮ আগস্ট ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিনিয়র সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে। কিন্তু তাকে মেনে নেননি ইউজিসির কর্মকর্তারা। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিগত সরকারের তোষামোদি করার মতো গর্হিত কাজ করেছেন– এমন অভিযোগ তুলে তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের আলটিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

ইউজিসিতে একজন চেয়ারম্যান ও পাঁচজন পূর্ণকালীন সদস্য রয়েছেন। চেয়ারম্যান ছাড়াও একই অবস্থা বিরাজ করছে অন্য চার সদস্যের ক্ষেত্রেও। দুর্নীতি ও আওয়ামী লীগের লোক হওয়ায় সাবেক সচিব ফেরদৌস জামান তুহিনকে আগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে ইউজিসিতে এক অচলাবস্থা বিরাজ করছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর চেয়ারম্যান পদ থেকে অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ পদত্যাগ করেন। তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে দীর্ঘদিন অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠান। পূর্ণকালীন পাঁচ সদস্য হলেন– খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র চন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিনা খান এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন।

এদিকে, ইউজিসি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীরকে অপসারণের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ। এর মধ্যে পদত্যাগ না করলে ইউজিসি ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছেন তারা। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে আগারগাঁও ইউজিসির সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

এর আগে ২৯ আগস্ট চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে তারই বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। সেখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ থেকে তার বিচার দাবি করা হয়। ভিসি থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীদের নির্যাতন করার অভিযোগ তুলে তার সব অপকর্মের বিচারে দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।

আন্দোলনকারীরা বলেন, মুহাম্মদ আলমগীর একজন স্বেচ্ছাচারী, দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচারের দোসর। তাকে ইউজিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ও সদস্যপদ থেকে অপসারণ করতে হবে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে অপসারণ করা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন তারা।

জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন ১৬ জুলাই মধ্যরাতে হঠাৎ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে ইউজিসি। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সব শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সঙ্গে সমন্বয় করে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন ইউজিসির তৎকালীন চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রফেসর আলমগীর।

জানতে চাইলে ইউজিসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মহিবুল আহসান বলেন, আগের সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়ায় তাদের নীতিগতভাবেই ইউজিসিতে আসা উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা নিজেদের সম্মান রেখে পদত্যাগ করছেন, তাদেরও আর এ পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত।

এনএম/এসএসএইচ