তিন বছরের বেশি সময় ঝুলে থাকার পর পদোন্নতির জট খুলতে জন্য রোববার (৯ মে) আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা ডাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে শিক্ষা ক্যাডারের তিনটি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ব্যাচ থেকে মোট ৩ হাজার ২৫৪ জনকে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু আত্তীকৃদের মামলা সংক্রান্ত জটিলতা, বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতির জটিলতার কারণে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) সভা সিদ্ধান্ত ছাড়াই মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে পদোন্নতির তালিকায় থাকা প্রায় তিন হাজারের বেশি শিক্ষকের পদোন্নতি পাওয়ার অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হলো।

জানা গেছে, তিন বছর পরে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে বেলা ১১টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ডিপিসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনা শেষে সভা স্থগিত করা হয়। 

ডিপিসির সভা চললেও পদোন্নতি তালিকায় নানা অসঙ্গতি, আত্তীকৃত শিক্ষকদের মামলা সংক্রান্ত ঝামেলা ও ভুল-ভ্রান্তি থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে না এসে সভাটি মুলতবি করা হয়েছে বলে সভার একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের আরেকটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, উচ্চ পর্যায়ের সমন্বয়হীনতার কারণে সভায় কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।

সভা শেষে জানতে চাইলে পদোন্নতি কমিটির সভাপতি ও মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, কিছু জটিলতার কারণে আজকের (রোববার) পদোন্নতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। ঈদের পর আরেকটি সভা ডাকা হবে। সেখানে হয়তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

তিনি বলেন, যোগ্য সবাইকে আমরা পদোন্নতি দেওয়ার চিন্তা নিয়ে এগুচ্ছি। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের কিছু কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলোতে ওপরের পদগুলো শূন্য বেশি থাকে। তখন দেখা যায় নিচের বা অপেক্ষাকৃত জুনিয়র শিক্ষকরা পদোন্নতির সুযোগ পেয়ে যান। যা অন্য  বিষয়ের শিক্ষকের সঙ্গে অমিল তৈরি হয়। তবে এটি একটি স্বাভাবিক নিয়ম। এখানে কারও হাত নেই।

সভাসূত্রে জানা গেছে, সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিযোগ্য প্রায় তিন হাজার ৩০৩ কর্মকর্তার মধ্যে সর্বমোট ৫০ শতাংশ পদোন্নতির দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আরও জানা গেছে, সরকারি টিটার্স ট্রেনিং কলেজ ও জাতীয়করণকৃত ১৮ মহিলা কলেজের পদোন্নতিযোগ্য আত্তীকৃত শিক্ষকদের নিয়ে মামলা সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকে সেগুলো যাচাইয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো ঠিকঠাক করে পরবর্তীতে মিটিংয়ে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে গত বছর অধ্যাপক পদে পদোন্নতির বাইরে থাকা কিছু কর্মকর্তাকেও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়ার ব্যাপারে গতকালের সভায় আলোচনা হয়েছে। ডিপিসির সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ফজলুর রহমান, মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক এবং অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

জানা যায়, দেশের অন্যান্য ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়া হলেও শিক্ষা ক্যাডারে বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতি হয়ে থাকে। যে কারণে অনেক জুনিয়র কর্মকর্তারা অন্যান্য সাবজেক্টের অনেক সিনিয়রদের চেয়ে দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে যায়। এতে কর্মক্ষেত্রে মানসিক অস্বস্তিতে ভোগেন অন্যান্য কর্মকর্তারা। তবে এবার ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতির আশা করছেন শিক্ষা ক্যাডারের অধিকাংশরাই।

তবে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দিতে হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে আমাদের কাছে লিখিত প্রস্তাব দিতে হবে। তারা এমন কোনো আবেদন করেনি। আর ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতির জন্য পিএসসির (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) সম্মিলিত গ্রেডেশন তালিকাও জমা দিতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি সূত্র জানায়, অন্য ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়া হলেও শিক্ষা ক্যাডারে ‘বিষয়ভিত্তিক’পদোন্নতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা ১৯৮৩ অনুসারে, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিযোগ্য সহযোগী অধ্যাপকদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সহযোগী অধ্যাপকদের বিষয়ভিত্তিক শূন্য পদের বিপরীতে পদোন্নতির জন্য সরকারি কলেজ ও সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের সহকারী অধ্যাপকের তিন হাজার ৩০৩ জন কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে তিন হাজার ২৫৪ জন পদোন্নতিযোগ্য। পদোন্নতি দিতে আদালতের কোনো বিধিনিষেধ নেই।

সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিযোগ্য শিক্ষকের মধ্যে ৯৫ জন বেসরকারি থেকে আত্তীকৃত। আর বাকিরা সরাসরি বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত। ২২ থেকে ২৬তম বিসিএস পর্যন্ত শিক্ষা ক্যাডারের সহকারী অধ্যাপক সবাইকে পদোন্নতির প্রস্তাব করেছে মাউশি। ২৬তম ব্যাচ পর্যন্ত সবাইকে পদোন্নতি দিতে সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হবে না। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী প্রতিবছর ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পেয়ে বর্তমানে পঞ্চম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন তারা। এই সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারের মতো।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে ৬৩৪ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল। এরপর এ পদে তিন বছর ধরে কোনো পদোন্নতি হয়নি। তবে গত বছর অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।

এনএম/ওএফ