কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন তুঙ্গে ঠিক সেই সময় ১৬ জুলাই মধ্যরাতে হঠাৎ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার নেপথ্যের কারিগর প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীরকে ফের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে সংস্থাটিতে। তাকে অপসারণের দাবিতে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ইউজিসিতে অবস্থান নিতে পারে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থী ও ইউজিসির কর্মকর্তারা।

 ইউজিসির কর্মকর্তারা জানান, বুধবার (২৮ আগস্ট) তাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তোপের মুখে পড়তে পারেন এমন শঙ্কায় বৃহস্পতিবার অফিস করেননি তিনি। 

এদিকে ইউজিসি চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাকে অপসারণের দাবিতে মানবন্ধন হয়েছে তারই বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট)। সেখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ব্যানারে বৃহস্পতিবার মানবন্ধন ও বিক্ষোভ থেকে তার বিচার দাবি করেন। ভিসি থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীদের নির্যাতন করার অভিযোগ তুলে তার সব অপকর্মের বিচারে দাবি জানান তারা।

জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন ১৬ জুলাই মধ্যরাতে হঠাৎ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকি প্রতিষ্ঠান মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সব শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সঙ্গে সমন্বয় করে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন ইউজিসির তৎকালীন চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীর।

এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও ইউজিসির কর্মকর্তাদের প্রতিবাদের মুখে চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে গত ১৮ আগস্ট পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর চট্টগ্রামের একটা গ্রুপের সঙ্গে লবিং করে ফের ইউজিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন দীপু মনির সুপারিশের দ্বিতীয় মেয়াদে থাকা এই সদস্য। বুধবার (২৮ আগস্ট) ফের তাকে সংস্থাটি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এর আগে নানা অনিয়ম, আওয়ামী লীগের সরকারের অবৈধ আদেশ বাস্তবায়ন করায় আলমগীর ও সাবেক সচিব ফেরদৌস জামানের পদত্যাগের দাবিতে ইউজিসিতে বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভের মুখে সচিব পদ থেকে ফেরদৌসকে সরিয়ে দেওয়া হলেও আলমগীর চেয়ারম্যান পদ আঁকড়ে ছিলেন। অবশেষ রোববার (১৮ আগস্ট) চেয়ারম্যানের পদ থেকেও সরে যান আলমগীর। ইউজিসি সচিব বরাবর নিজের পদত্যাগ পত্র পাঠান তিনি।

ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর ১১ আগস্ট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ। এরপর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা ইউজিসির সিনিয়র সদস্য প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীরের পদত্যাগের দাবি উঠেছিল।

১৬ জুলাই সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ব্যাখ্যা দিয়ে আলমগীর ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছিলেন, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধের নির্দেশ দেন।

তার দাবি, সরকারের নির্দেশ তখন আমরা মানতে বাধ্য ছিলাম। কোন আইনে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ওই সময় দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না তাই আইনি বিষয়টি দেখার সুযোগ হয়নি।

ইউজিসির অন্য একটি সূত্র বলছে, তিনি নিজ উদ্যোগেই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার পরামর্শ দেন। এরপর রাত ১১টায় তৎকালীন সচিবকে ফোন করে এনে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার নির্দেশ দেন এবং তাৎক্ষণিক চিঠি ইস্যু করান।

সেই চিঠিতে ইউজিসি প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয়। সমালোচনার মুখের একটু পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থলে বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনার কথা জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ কেন করা হলো, কোন আইনে করা হলো, এর কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি ইউজিসির চিঠিতে।

নিজস্ব আইনে চলা প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার এখতিয়ার কেবল সর্বোচ্চ ফোরাম সিন্ডিকেটের। এছাড়াও ১৯৭৩ সালে বিশেষ অধ্যাদেশে দেশের প্রথম চারটি- ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। তাই কোনোভাবেই ইউজিসির বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করতে পারে না।  

এনএম/এসকেডি