কোটা সংষ্কারের দাবিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলন ও সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হওয়ার পর প্রাথমিক বাদে সব স্তুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, আগামী ১৮ জুলাইয়ের (বৃহস্পতিবার) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করেছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় পর তিন দফায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে, প্রাথমিক স্তুরের স্কুল বন্ধের ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন জানান, আপাতত প্রাথমিক স্কুল বন্ধের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

সর্বশেষ রাত ১১টায় দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি। কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় দেশের সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজসহ সব কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা দিয়ে নিরাপদ আবাসস্থলে অবস্থানের নির্দেশনা প্রদান করা হলো।

এর আগে, রাত সাড়ে ১০টা ২০ মিনিটে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় বিষয়টি বিবেচনায় অনির্দিষ্টকালের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এতে জানানো হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব কলেজ ও প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে।

রাত সাড়ে ৮টায় চলমান এইচএসসি ও সমমানের আগামী ১৮ জুলাইয়ের (বৃহস্পতিবার) পরীক্ষা স্থগিত করে বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। তবে, আগামী ২১ জুলাই থেকে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা যথারীতি চলবে বলে জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, অনিবার্য কারণে আগামী ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য সব শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা স্থগিত করা হলো। স্থগিত হওয়া পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।

তার আগে ৮টার একটু পর সারা দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শ্রেণি কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল খায়ের।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

প্রসঙ্গত, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন আজ মঙ্গলবার বেশ সহিংস রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ৬ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ। 

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’

প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। 

গতকাল সোমবার দুপুর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাত ১০টার পর আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সারা দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে তাদের সমর্থনে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এসেছেন। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।

শেষ খবর পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ চার জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

এনএম/কেএ