কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে এবার আন্দোলনে নেমেছেন রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার দুপুরের পর তারা বেইলি রোড অবরোধ করেন। এ ছাড়া, বেইলি রোডের আরেক অংশে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

কোটা সংষ্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সোমবার দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের ব্যানারে এসব হামলার অভিযোগ উঠেছে।

সোমবারের ঘটনার পর আজ মঙ্গলবার সারাদেশে কোটাবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। এ আন্দোলনে নতুন করে যোগ দিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।

এদিকে মঙ্গলবার কোটা সংষ্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার পর ছাত্রলীগকে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই বয়কটের ডাক দিচ্ছেন। সময় যত সামনে গড়াচ্ছে তত এই বয়কটের ডাক জোরদার হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তমাখা ছবি প্রোফাইলে দিয়ে বয়কট সম্বলিত বিভিন্ন ক্যাপশন দিচ্ছেন।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’

প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সোমবার দুপুর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাত ১০টার পর আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সারা দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে তাদের সমর্থনে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এসেছেন। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব ও চানখারপুল এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।

শেষ খবর পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন।

এনএম/এমজে