কোটা সংষ্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সোমবার দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের ব্যানারে এসব হামলার অভিযোগ উঠেছে।

সোমবারের ঘটনার পর মঙ্গলবার সারাদেশে কোটাবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। এ আন্দোলনে নতুন করে যোগ দিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।

এদিকে মঙ্গলবার কোটা সংষ্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার পর ছাত্রলীগকে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই বয়কটের ডাক দিচ্ছেন। সময় যত সামনে গড়াচ্ছে এই বয়কটের ডাক তত জোরদার হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তমাখা ছবি প্রোফাইলে দিয়ে বয়কট সম্বলিত বিভিন্ন ক্যাপশন দিচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রোফাইলে ঢাবির রক্তাত্ত লগোতে ছাত্রলীগকে বয়কটের ডাক দিয়েছে। আইরিন আক্তার সানজিদা নামে একজন তার ফেসবুকে লেখেন, আমরা ভার্সিটি ব্যাচ (১৮ তম), মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ (১৪তম), বশেমুরকৃবি।

সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে আজ থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অথবা অন্য কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে আমাদের ব্যাচের কোনো শিক্ষার্থীর কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। আমরা এ সংগঠনসমূহকে স্থায়ীভাবে বয়কট করলাম।

ভবিষ্যতে যদি ছাত্রলীগ অথবা অন্য যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কোনো প্রোগ্রামে, কোনো মিছিলে অফলাইনে বা অনলাইনে আমাদের ব্যাচের কোনো শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তবে তাকে ব্যাচ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

কোটা আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বয়কট করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট, ব্যাচের ও জেলা ছাত্র কল্যাণের সহপাঠীরা। গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

সোমবার (১৫ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টার পর থেকেই এমন অসংখ্য ফেসবুক পোস্ট নজরে পড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ব্যাচের শ্রেণি প্রতিনিধিদের ফেসবুক আইডিতে।

নিজ নিজ বিভাগ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের একই কথা, কোনো ব্যাচমেট যদি আজকে বা আগামীতে সাধারণ শিক্ষার্থী তথা আমাদের ভাই-বোনদের ওপর আক্রমণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, আমাদের কোনো তথ্য পাচার করে এমন ব্যক্তি পাওয়া যায়, তাহলে তাকে আমরা আমাদের ব্যাচ থেকে বর্জন করব। একই সঙ্গে আমাদের সঙ্গে কোনো ক্লাস বা পরীক্ষায় সে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাকে ব্যাচ থেকে সামগ্রিকভাবে বয়কট করা হবে।

সোমবার দিবাগত রাত ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ, প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ, ফিন্যান্স বিভাগ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, অ্যাকাউন্টটিং বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীদের এমন কাজ করলে বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িতদের পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ থেকে সামগ্রিকভাবে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ হতে ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ১৫ জুলাই (সোমবার) মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বর্জনের ডাক দেয়।

নিজেদের বিভাগ ও ব্যাচ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী যদি আজকে বা আগামীতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী তথা আমাদের ভাই-বোনদের ওপর আক্রমণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা অথবা হামলাকারীদের সহযোগিতা বা তাদের ডিফেন্ড করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাকে আমাদের ব্যাচ থেকে বর্জন করব এবং আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার ক্লাস বা কোনো ধরনের পরীক্ষায় সে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

কোটা আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বয়কটের ডাক দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন বিভাগ ও ব্যাচ। শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এই বয়কটের ডাক দিচ্ছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত এ বয়কট অব্যাহত রয়েছে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

কোটা সংস্কারের দাবিতে মিছিলে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের বয়কটের ডাক দিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১৫ জুলাই) রাত থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ফেসবুক গ্রুপগুলোতে এ ব্যাপারে পোস্ট দিতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অন্তত ২০ বিভাগের শিক্ষার্থীরা এমন বয়কটের ডাক দিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

শাবিপ্রবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ হারিস পাশা লিখেছেন, আমরা সাস্ট সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ২৭ ব্যাচ ঘোষণা করছি যে, আমাদের ব্যাচের কেউ যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে তাহলে উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে ও তাদেরকে ব্যাচের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড হতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করব।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

কোটা আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বয়কটের ডাক দিচ্ছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এই বয়কটের ডাক দিচ্ছেন তারা।

আজ মঙ্গলবার এ নিউজ(দুপুর ১২টা) লেখা পর্যন্ত হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ, ফিন্যান্স বিভাগ, লোকপ্রশাসন বিভাগ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, সিএসই বিভাগ, ইইই বিভাগ, এমআইএস বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ, জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, বাংলা বিভাগ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, জিইএস বিভাগসহ প্রায় সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে এই বয়কটের ডাক দেন।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশের ন্যায় আন্দোলন চলছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি)। চলমান আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরই ফলশ্রুতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হলে হামলাকারীদের বয়কট করার ডাক দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, ২০ থেকে ২৩ ব্যাচের কমবেশি প্রতিটা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফেসবুকে পোস্টে সাধারণ শিক্ষার্থীরা লিখেছেন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী যদি আজকে বা আগামীতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী তথা আমাদের ভাই বোনদের উপর আক্রমণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাকে আমরা আমাদের ব্যাচ থেকে সামগ্রিকভাবে বর্জন করব এবং আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার ক্লাস বা পরীক্ষায় তাকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। আজ থেকে যতদিন কোটা সংস্কার ও শিক্ষার্থী হামলার সঠিক সমাধান না হবে ততদিন আমরা কোনো ধরনের ক্লাস বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব না।

এ বিষয়ে অ্যাগ্রিকালচার অনুষদের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান নিশি বলেন, যে সহপাঠী নিজের সহপাঠীর গায়ে হাত তুলতে দ্বিধাবোধ করে না, নিজের ভাই বোনকে রক্তাক্ত করে আনন্দ পায়, সেই সহপাঠীর আমাদের দরকার নেই। তাদের মতো নোংরা আর বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের সঙ্গে বসে ক্লাস পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। যতদিন কোটা আন্দোলন এবং এর যথাযথ সংস্কার না হচ্ছে ততদিন ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছি।

এনএম/এমজে