সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে উপাচার্যদের চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোটাবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরাও। এ অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে— শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরলে পড়াবে কে?

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারক সংস্থা ইউজিসি থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, সব প্রতিবাদকারী কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে নিজ নিজ কাজে অর্থাৎ পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে বলা হলো।

এদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে ১১তম দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম। কিন্তু তাদের ক্লাসে ফেরানোর কোনো উদ্যোগ ইউজিসি নেয়নি। এটাকে হাস্যকর হিসেবে অভিহিত করেছেন একজন উপাচার্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই উপাচার্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউজিসির কথায় শিক্ষার্থীরা যদি ক্লাসে ফিরেও তাহলে ক্লাস নেবে কারা? কোনো নির্দেশনা দেওয়ার আগে চিন্তাভাবনা করে দেওয়া উচিত।

ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সই করা চিঠি দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রদত্ত পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা প্রতিপালন প্রসঙ্গ।

চিঠিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দায়ের করা দুটি সিভিল পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালতের দেওয়া এসব পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে গতকাল (বুধবার) কোটা সংক্রান্ত একটি পর্যালোচনার কপি আমাদের পাঠানো হয়েছে। সেই কপিটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের পাঠানো হয়েছে।

শিক্ষকরা তো ক্লাস বর্জনে রয়েছে, তাদের ব্যাপারে ইউজিসি কী করবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটার জবাব আমি দিতে পারব না।

শিক্ষক আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, এ বিষয়ে আমাদের ফেডারেশন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এখনো যেহেতু আমাদের দাবি মানা হয়নি তাই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন থেকে কী সিদ্ধান্ত আসে সেদিক বিবেচনা করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

ইউজিসির চিঠি প্রসঙ্গ তিনি বলেন, এটা ইউজিসি ও সরকার বলতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে চাইলে ফিরুক। কিন্তু ক্লাস নেওয়ার মালিক আমরা শিক্ষকরা। আমরা না চাইলে তারা তো আর ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে পারবে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রত্যয় স্কিম বাতিলের জন্য আন্দোলন করছি। সুতরাং এই দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত তো আমরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে পারি না।

এনএম/এমজে